নদীবন্দরে নেমে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে ক্ষুদ্র পরিবহনের সংকটে পড়েছে যাত্রীরা। যাত্রীর তুলনায় অল্পসংখ্যক থ্রি-হুইলার। তার ওপর পূর্বের তুলনায় পাঁচগুণ ভাড়া বেশি আদায় ও ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করায় বিপাকে পড়েছে ঘরমুখো মানুষ। অনেকে লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটেই রওয়ানা দিয়েছেন। এ সময়ে ঘরমুখো মানুষের মুখে সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর সৌজন্যে বিনাভাড়ায় বাস সার্ভিস না দেওয়ায় আক্ষেপ করতে শোনা গেছে।
শুক্রবার (৮ জুলাই) ভোরে এমনই চিত্র দেখা গেছে বরিশাল নদী বন্দর থেকে রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল সংযুক্ত সড়কে।
নদীবন্দর এলাকায় সপিরবারে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ড্রাইভার নাসির উদ্দিনের সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায় সরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম সালেহর। তিনি জানান, সাধারণত লঞ্চঘাট থেকে রূপাতলী ১৫/২০ টাকা ভাড়া। ঈদে জনপ্রতি ৫০ টাকা নিতে পারে। কিন্তু গাড়ি চালক ১০০ টাকা করে দাবি করছে। মেয়রের ফ্রি বাস সার্ভিস নাই অমনি অটো, আলফাচালকরা (থ্রি-হুইলার) জুলুম শুরু করেছেন।
থ্রি-হুইলার চালক নাসির উদ্দিন দাবি করেন, অন্য সব গাড়িতে ১২০ টাকা করেও নিচ্ছে। আমি কমিয়ে ১শ টাকা চেয়েছি। এই ভাড়ায় গেলে যাবে, না গেলে কোনো তর্ক নেই। অনেক যাত্রী রাস্তায় হাঁটছে। এবার ফ্রি বাস নাই, যাত্রী পাবই।
নথুল্লাবাদের গাড়ি না পেয়ে হাঁটতে শুরু করা আলেয়া বেগম জানান, স্বরূপকাঠি পর্যন্ত যাবেন। সঙ্গে ছোট দুটি সন্তান রয়েছে। অটো রিকশায় যে ভাড়া চাইছে সে টাকা খরচ করে ঢাকা থেকেও আসিনি। এখন নিরুপায় হয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছি। সব গাড়িগুলো দূরের ভাড়া নিয়ে যাচ্ছে। অল্প দূরের ভাড়ায় কোনো গাড়ি পাচ্ছি না।
ইমি নামে আরেক কলেজছাত্রী জানান, ঢাকা থেকে লঞ্চে দাঁড়িয়ে আসতে যে কষ্ট না হয়েছে লঞ্চঘাট থেকে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে যেতে সেই কষ্ট হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম এবারও বরিশালের মেয়র ফ্রি বাস দিবে। কিন্তু তা দিলেন না। কেন দিলেন না জানি না। তবে তার বাস সার্ভিস দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ মিস করছে। তার উচিত ছিল এবারও ব্যবস্থা করা। তাতে হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি কমত।
সাইদুর রহমান নামে এক যাত্রী জানান, ১৩ জনে মিলে ২০০ টাকা জনপ্রতি ভাড়া চুক্তিতে আলফা ভাড়া করেছি। এর মধ্যে ১০ জন বসে যাচ্ছেন। বাকি তিনজন গাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। এবারের ঈদ যাত্রার অভিজ্ঞতা খুব বাজে হচ্ছে।
আলফার চালক মাইনুল ইসলাম বলেন, গাড়ির তুলনায় যাত্রী অনেক বেশি। বিগত দিনের ঈদের মতোই লঞ্চে যাত্রী এসেছে। এত যাত্রী যাওয়ার পরিবহন বরিশালে নেই। এ জন্য একটু ঝুঁকি হলেও বেশি যাত্রী নিয়ে যাত্রা করতে হচ্ছে।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় কোতয়ালী থানা পুলিশ তৎপর রয়েছে। তাছাড়া নদীবন্দর এলাকায় পরিবহনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে যাত্রাবাহী ছাড়া অন্য পরিবহনগুলো চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রথম দিনেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখছি।
প্রসঙ্গত, এর আগে ঈদে ঘরমুখো মানুষদের ভোগান্তি লাঘবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর উদ্যোগে লঞ্চঘাট থেকে রূপাতলী ও নথুল্লাবাদে বিনা ভাড়ায় বাস সার্ভিস চালু ছিল। তখন বিনা ভোগান্তিতে মানুষ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে পারত। সাদিক আব্দুল্লাহর এই সেবা দক্ষিণাঞ্চলব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানিয়েছেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে আজই প্রথম স্পেশাল সার্ভিস শুরু হয়েছে। এই দিনে সরাসরি রুটের ১০টি এবং ভায়া রুটের ৪টিসহ মোট ১৪ টি লঞ্চ এসেছে।
প্রতিটি লঞ্চেই কেবিন, সোফা, ডেক পূর্ণ করে ছাদেও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। তবে তা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন নয় বলে দাবি করেছেন এই পরিদর্শক।