দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা সেতু সড়ক যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন আনলেও সংকীর্ণ মহাসড়ক বরিশালসহ ছয় জেলাবাসীকে ফেলেছে মারাত্মক দুর্ভোগে। এর মধ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নগরীর মধ্যে থাকা ১২ কিলোমিটারে দ্রুতগামী যানবাহনের চাপ চার মোড় দিয়ে চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। আর এ চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশও।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটাসহ দক্ষিণের ছয় জেলার মহাসড়কে গাড়ি চলাচল কয়েক গুণ বাড়লেও বাড়েনি সড়কের প্রশস্ততা। ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে। এরপর ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২০৫ কিলোমিটার মহাসড়কই অপ্রশস্ত। এ অপ্রশস্ত মহাসড়কে যানবাহনের চাপের কারণে ওই সব এলাকাবাসীকে সড়ক পারাপারে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। এর মধ্যে যানবাহনের বেপরোয়া গতি ও সড়কের বাঁকে দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই এক থেকে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন বরিশাল নগরবাসী। মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার রয়েছে নগরীর মধ্যে। এ কারণে নগরীর সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে যানবাহন প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পার হতে সময় লেগে যায়। তিনটি সড়কের মোড় এবং বাস টার্মিনালের গাড়িও মহাসড়কের ওপর থাকায় বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উভয় প্রান্ত থেকেই এ যানজট লেগে থাকে। আর তা সামাল দিতে বেসামাল অবস্থা হয় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই স্থান অতিক্রমকালে দূর-দূরান্তের গাড়ি ছাড়াও নগরবাসীকেও ফেলে দুর্ভোগে।
সেখান থেকে বের হয়ে নগরীর চৌমাথা এলাকা পার হতে আবারও যানজট। মহাসড়কটি চারটি সড়কের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সারাক্ষণ ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন আটকা পড়ছে। এছাড়া ওই চৌমাথা এলাকায় রয়েছে একটি বাজারও। সেখানে মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় দুই পাশের দুই সড়কের মুখেই গড়ে তোলা হয়েছে থ্রিহুইলার ও অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। এ কারণে সেখানে যানজট তীব্র হয়। এছাড়া সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে রেখেছে এ মোড়টিকে। যার ফলে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষকে ওই মোড় পার হতে কিছু সময় ব্যয় করতে হয়। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেছে বৃদ্ধ এবং শিশুদের। দ্রুত মহাসড়ক পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এ কারণে সেখানে ত্রিমুখী ওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তাতে স্থানীয় প্রশাসনের সামান্যতম টনক নড়াতে পারেনি।
চৌমাথা থেকে সাগরদী আমতলার মোড় এলাকা অতিক্রমকালে আবারও জট। তিনটি সড়কের মোড় হচ্ছে এটি। বিশেষ করে ওই মোড় অতিক্রম করে একদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা, শের-ই- বাংলা মেডিক্যাল কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল নৌ-বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার যাতায়াতের পথ। যার কারণে ওই স্থানেও জট নগরবাসীকে দুর্ভোগে ফেলেছে।
আমতলার মোড় অতিক্রম করার পরই আবারও বড় ধরনের জট বাধে রূপাতলী চার রাস্তা মোড়ে। ওই মোড়ের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড। সেখানেও সড়কের ওপর বাস রেখে যাত্রী উঠানামা এবং সেখান থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, কুয়াকাটা, পিরোজপুরসহ ১৬টি রুটের উদ্দেশ্যে বাস চলাচল করে। এ কারণে ওই মোড়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ওই চারটি মোড়ে স্বাভাবিক দিনগুলোর যানজট নগরবাসী থেকে শুরু করে যারা যাতায়াত করেন তাদের কাছে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণ ছয় লেন থেকে আসা গাড়িগুলো অপ্রশস্ত মহাসড়কে আসার সঙ্গে সঙ্গে গতি কমে যায়। তার মধ্যে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ চারটি মোড়ে মহাসড়কের গাড়ি এবং নগরীর অভ্যন্তরীণ গাড়িতে বড় ধরনের জট লেগেই থাকে। আর বিশেষ দিনগুলোতে এ জট আরও ভয়াবহ হয়।
সমাজকর্মী কাজী মিজানুর রহমান বলেন, প্রশাসনের বিভিন্ন সভা-সেমিনার এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই চার মোড়ে ওভারব্রিজ অথবা আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলন্ত সিঁড়ি দেওয়ার জোর আবেদন জানানো হচ্ছে। কিন্তু সেই আবেদন সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছলেও তারা কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না। এছাড়া নগরীর মধ্যে ১২ কিলোমিটার মহাসড়ক নগরবাসীর দুর্ভোগের কারণ। সেই থেকে মুক্তি পেতে বাইপাস সড়কও প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র নগরীর ওই চার মোড় নয়, ভাঙ্গা থেকে শুরু করে কুয়াকাটা পর্যন্ত একই অবস্থা। ছয় লেন সড়ক থেকে যখন বড় বড় গাড়িগুলো অপ্রশস্ত সড়কে এসে পড়ে তখন তার গতি মন্থর হয়ে আসে। এতে করে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যার দুর্ভোগ পোহাতে হয় ওই এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে গাড়িতে থাকা লোকজনকে। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব অপ্রশস্ত সড়ক ছয় লেনে উন্নীত করতে হবে। তা হলে পদ্মা সেতুর শতভাগ সুফল এ অঞ্চলবাসী ভোগ করতে পারবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, নগরীর সীমান্তবর্তী এলাকা গড়িয়ার পাড় থেকে দপদপিয়া ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভাঙ্গা থেকে ছয় লেন মহাসড়কও করা হবে। ইতোমধ্যে নগরীর মধ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের প্রশস্ততা বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।