33 C
Dhaka
এপ্রিল ২৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ আদালতপাড়া

শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়: হাইকোর্ট

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি নিরাপত্তা না পায় তা হলে শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবে-সে প্রশ্নও তোলেন আদালত।

নুসরাতের কথোপকথন ভিডিও করে (সোশ্যাল মিডিয়া) ফেসবুকে ভাইরাল করা প্রসঙ্গে আদালত আরও বলেন, ‘একজন পুলিশ অফিসারের আচরণ এমন হতে পারে না।’

এরপর ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এবং ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের ভূমিকা তদন্ত করার নির্দেশ দেন।

আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্টের বিচারতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল বাশার।

পরে এবিএম আব্দুল্লাহ আল বাশার ও ইউনুস আলী আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ড ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনায় গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এবং ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের ভূমিকা ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জনপ্রশাসন ও শিক্ষা সচিব এ তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেবেন। একইসঙ্গে তার নিষ্ক্রিয়তায় চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন।

রিটের বিবাদীরা হলেন-জনপ্রশাসন সচিব, শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ফেনীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সোনাগাজী থানার ওসি।

দৈনিক সমকালে ২১ জুন ‘এডিএম এনামুলের ভূমিকা, পুলিশের তদন্তের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন মন্ত্রণালয়ের’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের ভূমিকা নিয়ে পুলিশ সদর দফতরের তদন্তের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, পুলিশ সদর দফতরের গঠিত তদন্ত কমিটি, তার কার্যপরিধি এবং তদন্ত কমিটি এডিএমের ব্যাপারে তদন্ত করেছে কিনা, করে থাকলে কোন এখতিয়ার বলে করেছে তা স্পষ্ট করতে হবে।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মল্লিকা খাতুন। চিঠির বিষয়বস্তু হিসেবে লেখা হয়, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের দায়িত্বে অবহেলার ব্যাপারে বিশেষ প্রতিবেদন।

পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে তদন্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় প্রশাসনিকভাবে যারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। নুসরাতের পরিবারের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রশাসনিকভাবে যারা এ ঘটনায় গাফিলতি করেছিল, তাদের ব্যাপারে তথ্য উঠে আসে।

এদিকে নুসরাতের হত্যার ঘটনায় সদর দফতরের এক ডিআইজিকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল পুলিশ। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফেনীর এসপি, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি, দুই এসআইর দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির বিষয় উঠে আসে। তদন্ত কমিটি চারজনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করেছে। এ ছাড়া ফেনীর তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি পি কে এনামুল কবিরের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। পুলিশ সদর দফতরের এ প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, শুরু থেকেই এসপি-এডিএম এবং ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার অপচেষ্টা চালান।

৪ এপ্রিল নুসরাত ও তার মা অধ্যক্ষ সিরাজের বিচার চাইতে যান মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি এনামুল করিমের অফিসে। বিচার তো দূরের কথা, তিনি ঘটনাটি চেপে যেতে বলেন নুসরাতকে। এনামুল তাদের বলেন, ‘এখন কেন এসেছেন? আপনারা তো মামলা করে ফেলেছেন। মামলা করার আগে এলে দেখতাম, কী করা যায়।’

নুসরাতকে তিনি আরও বলেন, ‘প্রিন্সিপাল খারাপ, সবাই জানে। তুমি তার কাছে গেছ কেন? যখন গেছ, তখন হজম করতে পারলে না কেন? তোমার বাবাকে মাদরাসায় বসানোর জন্য এ রকম নাটক সাজিয়েছো।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদরাসার গভর্নিং বডির প্রধান হিসেবে এনামুল করিম শুরুতেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে নুসরাতের এ পরিণতি হতো না। উল্টো তিনি নুসরাতের পরিবারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। আবার নুসরাতের ঘটনার পর এনামুলকে প্রধান করেই তদন্ত করে জেলা প্রশাসন।

এর আগে গত ১১ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে মারা যাওয়া মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মামলা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, এ মামলায় কোনো গাফিলতি হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখবেন বলেছিলেন হাইকোর্ট। সাগর-রুনি, তনুসহ অন্যান্য মামলার মতো কোনোভাবেই যেন রাফির মামলা হারিয়ে না যায়, তাও হাইকোর্টের নজরে থাকবে সে কথা বলেছিলেন আদালত।

নুসরাত হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন। প্রথম আলোসহ পাঁচটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলো তুলে ধরে আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে এ আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক।

সম্পর্কিত পোস্ট

এমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না

banglarmukh official

বগুড়ায় স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির সব ছবি অপসারণের নির্দেশ হাইকোর্টের

banglarmukh official

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ: ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ হাইকোর্টের

banglarmukh official

অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমান ও মামুনের আপিলের রায় ৬ মার্চ

banglarmukh official

আদালতে সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান

banglarmukh official