এপ্রিল ২২, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় ঢাকা প্রচ্ছদ শিক্ষাঙ্গন

‘এতটুকু বাচ্চাদের এত ভয় পান!’

‘আর চুপ থাকতে পারছি না। শুটিং থেকে অনুমতি নিলাম, দুপুরে নামছি তোমাদের সঙ্গে উত্তরায়। আমার কোনো সহকর্মী ভাইবোনেরা নামতে চাইলে খুশি হব।’ কথাগুলো নতুন প্রজন্মের অভিনয়শিল্পী তৌসিফ মাহবুবের। বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এভাবেই নিজের একাত্মতার কথা বললেন তিনি। আজ বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে তিন দিন ধরেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সরাসরি মাঠে থাকতে না পারলেও চলচ্চিত্র, টিভি আর সংগীত জগতের অনেক তারকা সমর্থন দিয়েছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন।

সংগীতশিল্পী মাকসুদ বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে, এ নতুন কোনো বিষয় না। গত ঈদের ছুটিতে এক দিনেই ৫৫ জন লোক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল | আমরা প্রতিবাদ তো দূরের কথা, একটি শব্দও করিনি। তবে র‍্যাডিসন হোটেলের সামনে যা ঘটেছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে যে ভয়াবহ অবস্থা আর তাণ্ডব চলছে এবং বেশ কিছুদিন চলবে, এর জন্য সরকারের কতিপয় মন্ত্রী আর হর্তাকর্তার নির্বুদ্ধিতা বেশি দায়ী।’

মাকসুদ আরও বলেন, ‘বন্ধুদের অনুরোধ করছি, বাচ্চা বা পোলাপান—এ শব্দগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করুন। এই একুশ শতকে এসব এবিউসিভ শব্দ সোজা কথায় গালি। ওদের বয়স আমাদের চেয়ে কম হতে পারে। কিন্তু মেধা, মনন ও ব্যবহারে আমাদের চেয়ে ওরা অনেক উচ্চ মানুষিক মার্গে বসবাস করে, এ কথাটা ভুলবেন না। ওদের মনের ধারের কাছেও আমরা ভিড়তে পারব না। এমনকি স্বপ্নেও না। ওদের সম্মান পেতে হলে আগে আপনারা সম্মান দিতে শিখুন।’

তিন দিন ধরে চলতে থাকা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অনেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘বাচ্চা’ বললেও বিষয়টি মানতে নারাজ এই পরিচালক। তিনি বলেন, ‘বাচ্চা মানে বাচ্চা না, ভাইবোনেরা আমার! বেশ কিছু ভিডিওতে আন্দোলনরত স্কুল-কলেজের ছোট ছোট বাচ্চাদের কথা শুনে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করেছি কাহলিল জিব্রানের কবিতা। যেখানে লেখা হয়েছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পূর্ববর্তী প্রজন্মের চেয়ে এগিয়েই থাকে। তোমরা এগিয়েই আছো ভাইবোনেরা! লাভ ইউ।’

ফারুকী তাঁর দেওয়া পোস্টের মাধ্যমে সরকারের কাছেও অনুরোধ জানিয়েছেন। সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন যেন দ্রুত একটা কমিটি করা হয়। যেখানে শুধু প্রবীণ নাগরিকেরা থাকবেন, তা না। তরুণ মেধাবী প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলীদেরও রাখতে হবে। সেই কমিটির কাজ হবে সবকিছু প্রযুক্তিনির্ভর করা। ফারুকী বলেন, ‘এখন একটাই অনুরোধ, সমষ্টির এই শক্তিকে একটা সুন্দর ফলাফলের দিকে নেওয়ার দাবি তোলো। জাবাল-ই-নূরের ঘটনায় অপরাধীর সাজা হতে হবে, শাজাহান খানকে ক্ষমতাশূন্য করতে হবে, এগুলো সবই দরকার। পাশাপাশি, দাবি তোলো সামগ্রিক সংস্কারের। লাইসেন্স, ফিটনেস থেকে শুরু করে, ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা, আউটডোর ক্যামেরা, রুট বণ্টনবিষয়ক দুর্নীতি, আইন সংস্কার—মোট কথা রাস্তাঘাট নিরাপদ করার জন্য, অপরাধী শনাক্ত করার জন্য যা কিছু বিবেচনায় নেওয়া দরকার, সবকিছু বিবেচনায় নিতে হবে।’

অভিনয়শিল্পী শাহনাজ খুশি দুই সন্তানের মা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ যেভাবে নির্যাতন করছে, তাতে আতঙ্কিত এই অভিনয়শিল্পী। এসব দেখে তাঁর কণ্ঠ থেকে ঘৃণা আর ক্ষোভ ঝরেছে। তিনি বলেন, ‘দয়া করে বাচ্চাদের গায়ে হাত দেবেন না। তারা কোনো আসনের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য পথে নামে নাই, তাদের দাবি কেবল পথের নিরাপত্তা। এই দেশের পরবর্তী কর্ণধার এই বাচ্চারাই। এখনো অনেক বাচ্চা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। বাচ্চাদের মাথায় লাঠির আঘাত নয়, ভরসার হাত রাখুন। মা-বাবাদের পথে নামতে বাধ্য করবেন না। ওরা আমাদের সন্তান। নাড়ি ছেঁড়া ধন!’

মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘ওরা কিন্তু রাজনীতি বোঝে না, রাজনীতি করতে পথে নামেনি। কিন্তু রাজনীতির প্রতি, রাজনীতিবিদদের প্রতি কী পরিমাণ ঘৃণা জন্মে যাবে তাদের মনে, ভেবে দেখছেন! এই ছেলেরাই আগামী ২/১ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, হয়তো ছাত্র রাজনীতিও করবে। আজকের এই ঘৃণা ওদের ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে দেবে? প্রধানমন্ত্রী, তিনি তো কোমল হৃদয়ের মানুষ, সারা জীবন সেভাবেই দেখে এসেছি তাঁকে। আজ কেন তাঁর কোমলতা দেখাতে দেরি করছেন? তাঁর সম্বন্ধে এই বাচ্চাগুলোর ধারণা কোন দিকে যাচ্ছে!’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড বলেছেন, ‘রাষ্ট্র প্লিজ থামুন। ওরা বাচ্চা। ওরা সবেমাত্র স্কুলছাত্র। ওরা আমাদের সন্তান। ওরা ধান্দাবাজ রাজনীতিক না। ওরা ব্যাংক লুটেরাদের বাঁচানোর পক্ষের কোনো শক্তি না। ওরা ধর্ষকের রক্ষক না। ওরা ক্ষমতা দখলের লোভে রাস্তায় না। ওরা শুধু ওদের বন্ধু-সহপাঠীর নির্মম মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেনি। ওরা বন্ধু হত্যার বিচার চায়। ওরা সড়কে জীবনের নিরাপত্তা চায়। এটা ওদের অপরাধ?’

নাট্যকার মাসুম রেজা বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করবেন না। দাবি মেনে নিয়ে ওদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরান।’

অভিনয়শিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতি বলেছেন, ‘আর ঘরে বসে থাকা যায় না, আমার মন উত্তাল তোমাদের সঙ্গে। আপনি আছেন তো?’

মৌসুমী হামিদ ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কী বলব আপনাদের? হাতে অস্ত্র, মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, পায়েও হাঁটু পর্যন্ত গার্ড পরে আছেন। তারপরও কলেজ ড্রেস পরা নিরস্ত্র একটা বাচ্চাকে লাথি মারার জন্য মাথা পর্যন্ত পা তুলছেন। লজ্জা করে না আপনাদের? আপনার এত সাজ-পোশাকে জঙ্গি দমন করতে আসছেন? এতটুকু বাচ্চাদের এত ভয় পান? পুলিশ মানে তো আপনারা না! তাহলে আপনারা কারা?’

এ প্রজন্মের আরেক পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহ বলেছেন, ‘আজ না হয় শহরের স্কুল-কলেজের ছাত্রগুলো রাস্তায় নেমেছে, এতেই এই অবস্থা! কাল যদি সারা বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নামে, তখন কেমন হবে!’

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা

banglarmukh official

শুক্রবার কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক, দ্রুত বিচার নিশ্চিতের নির্দেশ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

২০২৬ সালেই বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণ করা হবে

banglarmukh official