বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্রীল চুরির দায়ে এক কর্মচারী-কে জরিমানা করেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত ইউসুফ আলী মিলন। সে হাসপাতালের অফিস সহায়ক পদে কর্মরত রয়েছে।
চলতি মাসের ২২ তারিখে হাসপাতালের পরিচালক স্বাক্ষরিত একটি স্মারক বিজ্ঞপ্তি-তে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঐ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, হাসপাতালের সম্মুখে বাগানের চারিদিকে লোহার গ্রীল বেষ্টিত থাকা সরকারী মালামাল চুরি’র অভিযোগ ওঠে ইউসুফ আলী মিলনের বিরুদ্ধে।
তবে ঐ সামগ্রীর সমপরিমান মুল্য সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি ইউসুফ আলী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ওঠা চুরির অভিযোগে সত্যতা পান গঠিত তদন্ত কমিটি। ঐ গ্রীলের পরিমান হবে ৩’শ থেকে সাড়ে ৩’শ কেজি। যার মুল্য গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত হয়েছে ৭৪ হাজার টাকা।
কিন্তু অদ্যাবধি অভিযোগ ওঠা গ্রীলের মূল্য বাবদ সংশ্লিষ্ট কোন চালান নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত বোর্ডের নিকট জমা দেননি মিলন বলে নোটিশে উল্লেখ রয়েছে।
এর-ই ধারবাহিকতায় নির্ধারিত ৭৪ হাজার টাকা আদেশের ৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে সরকারী কোষাগারে জমা দিয়া চালানের মূল কপি পরিচালকের কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। যদিও ২২ তারিখে চিঠি ইস্যু হলেও ২৫ তারিখ পর্যন্ত কোষাগারে টাকা জমা দেয়নি মিলন বলে হাসপাল সুত্রে জানা গেছে।
এদিকে এর আগে চলতি বছরের ৭ মে গ্রীল চুরির অভিযোগে অনেকের সন্ধেহ অনুযায়ি ইউসুফ আলী মিলনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এম সাইফুল ইসলাম।
নোটিশ থেকে জানা যায়, শেবাচিম হাসপাতালের সম্মুখে চারিদিকে লোহার তৈরি গ্রীল দিয়ে বাগান বেষ্টিত ছিল। সেই সরকারি মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠে মিলনের বিরুদ্ধে।
এঘটনায় মিলনকে ৩ কার্যদিবসের মধ্য সন্তোষজনক জবাব পরিচালকের কাছে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় যথাযথ শাস্তি আরোপ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ রয়েছে। এঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এর-ই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনায় মিলনের সম্পৃক্ততা ও চুরির সত্যতা পেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অভিযুক্ত মিলনের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অনিয়মের অভিযোগে বরিশালের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় গত বছরের ২৮ অক্টোবর ‘মিলনের গ্রাস থেকে কবে মুক্তি পাবে শেবাচিম হাসপাতাল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত সে সংবাদে ওয়ার্ড মাস্টারদের সহযোগীতায় সরকারি বাসা বহিরাগতদের ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকার বানিজ্য, পাওয়ার্ড মাস্টারদেরও সহকারী হিসাবে ন্যায়ের পওেয়ার পরে ডিউটি রোস্টার বানিজ্য, দক্ষিন আলেকান্দা ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি জায়গা জোর পূর্বক দখল করে, স্টল নির্মান করে ও ভাড়া দিয়ে অর্থ আদায় সহ নানা অভিযোগ উল্লেখ করা হয়।
যা নিয়ে ঐসময়ে সাধারন কর্মচারী পাশ্ববর্তী ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়েরও করেন। এছাড়া, তৎকালীন হাসপাতালের পরিচালক বাকের হোসেন অভিযুক্ত ‘মিলনের এই সব অপকর্মের বিষয়ে শোকজ নোটিশ প্রদান করলে মিলন ক্ষিপ্ত হয়ে পরিচালককে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিতও করে বলে প্রকাশিত সেই সংবাদে উল্লেখ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক মোঃ ইউসুফ আলী মিলনের মুঠোফোনে সংযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, আত্নসাতের অভিযোগ ওঠায় মিলনের বিরুদ্ধে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
যেখানে গণপুর্ত, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিল। তদন্তে মিলন দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে ৭৪ হাজার টাকা জরিমানা হয়।
কিন্ত নোটিশ প্রদানের পর নির্ধারিত কার্যদিবসের মধ্যে টাকা জমা দেননি মিলন। তাকে আরও ২ দিন সময় দেয়া হয়েছে।
পরপর তিনবার নোটিশেও কোষাগারে জরিমানার টাকা জমা না দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া টাকা জমার পর যেহেতু চুরি অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে অফিসিয়ালভাবেও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান পরিচালক।