বন্যা দূর্গতদের উদ্ধার করতে গিয়ে মুখ লুকিয়ে নিজের হাঁটুকে সিঁড়ি বানিয়ে অসংখ্য নারীদের উদ্ধার করে রিতীমতো মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর গর্বিত ল্যান্স কর্পোরাল কাজী সুজন।
গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন নেটিজেন পৃথিবীর ইতিহাসে নজির স্থাপন করা সেনা বাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল কাজী সুজনের ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। মুহুর্তের মধ্যে ভিডিওটি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই কাজী সুজনকে সেনা বাহিনীর সুপার হিরো আখ্যা দিয়ে পোস্ট করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেনা বাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল কাজী সুজন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকীর কাঠালতলী গ্রামের সন্তান। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর তার আর্টিলারী কোরে কমর্রত রয়েছেন।
গত কয়েকদিন পূর্বে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপূরে বন্যার্ত এলাকার রেসকিউট টিমের উদ্ধার কাজে যান কাজী সুজন। এ সময় তিনি নারীদের সম্মান দেখিয়ে নিজের মুখ লুকিয়ে হাঁটুকে সিঁড়ি বানিয়ে অসংখ্য নারীদের উদ্ধার করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পৃথিবীর ইতিহাস নজির স্থাপন করা এ দৃশ্য কোন এক নেটিজেন ভিডিও ধারণ করে ‘এটা বাংলাদেশ সেনা বাহিনী বলেই সম্ভব’ ক্যাপশন লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। মুহুর্তের মধ্যেই ওই ভিডিওটি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি বছরের ২০ জুন ল্যান্স কর্পোরাল কাজী সুজন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন শেষ করে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি মিশন এরিয়াতে বিভিন্ন ধরনের মানবিক কার্যক্রম করে আন্তর্জাতিক মন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রেখেছেন।
ছাত্রজীবন থেকেই কাজী সুজন নিজ এলাকা গৌরনদীর বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। মুমূর্ষ অসহায় রোগীদের জন্য তিনি দীর্ঘ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠা করেছেন গৌরনদী ব্লাড ডোর্নাস ক্লাব (জিবিডিসি)। যা একঝাঁক তরুন ও যুব শিক্ষার্থীদের নিয়ে সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে।
সেনা বাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল কাজী সুজন বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই দেশের উন্নয়নে কাজ করে আসছি। দেশ সেবার জন্য বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে যোগদান করেছি। দেশের মানুষের কল্যাণেনিজের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত কাজ করে যাবো।
তিনি আরও বলেন, একটি অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গৌরনদী ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের পক্ষ থেকে গত ছয় বছরে ব্যাপক মানবিক কর্মকা- পরিচালিত হয়েছে। যা ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে।
বর্তমানে দেশের মানুষের সহযোগিতায় বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের সদস্যরা। এছাড়াও ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের মাধ্যমে ফ্রী ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন, অসহায় রোগীকে স্বেচ্ছায় রক্তদান, অন্যকে রক্তদানে আগ্রহী করে তোলা, থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জনসচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন,
বাল্যবিবাহ রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, যৌতুক প্রথারোধে জনসচেতনতা, গরিব অসহায়কে সাহায্য ও তাদের পাশে দাঁড়ানো, মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি, বৃক্ষ রোপণ, অসহায় শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার সুযোগ করে দেওয়া, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে ত্রাণ সামগ্রী এবং শীত মৌসুমে শীতবস্ত্র বিতরণ, পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনমূলক কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।