সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে মোট ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৫টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া সারাদেশের অধস্তন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৫টি। যা সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে (সকল জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং অধীনস্ত আদালত সমূহ, ট্রাইব্যুনাল, সিএমএম ও সিজেএম আদালত এবং অধীনস্ত আদালতসমূহ) সব মিলিয়ে মোট ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৩টি মামলা বিচারাধীন
সারাদেশে মামলার এই পরিসংখ্যানের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে মামলার পরিসংখ্যান বের করার কারণ হলো- প্রথমত, মামলার সংখ্যা জানা। দ্বিতীয়ত, মামলা নিষ্পত্তিতে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা। কোন আদালতে কত মামলা, মামলা নিষ্পত্তির জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য এই পরিসংখ্যান বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক সঙ্কট রয়েছে। পরপর দুইজন বিচারপতি পদত্যাগ করার পর এই সংঙ্কট তৈরি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। তাই বিচারক সঙ্কটে সময় মতো বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দিনে দিনে মামলার স্তূপ আকার ধারণ করছে। ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন ২০১৮ সাল পযন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ১৩,০২৬টি। অন্যদিকে, বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা ৬৩৫১টি মামলা। অন্যান্য মামলা ১১৬টি। মোট ১৯৪৯৩টি মামলা আপিল বিভাগে।
যদিও চলতি বছর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ১৮ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৪৯২টি। অন্যদিকে, বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা ৩ লাখ ১২ হাজার ২০৫টি মামলা। রিট ৭৮৯৩৯টি আদিম রিট ৯৭৭৯টি মামলা।
তবে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে খুব বেশি সংখ্যাক বিচারপতির প্রয়োজন নেই বলে জানালেও আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে প্রায় পাঁচ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
হাইকোর্টে বিচারকের সংখ্যা কত হবে তা সংবিধানে নির্ধারণ করা নেই। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ৯৪(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করে থাকেন। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন বোধ করবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।’ বিচার বিভাগের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো মামলা জট। প্রতিবছর যে পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি হয়, তার চেয়ে মামলা দায়ের হয় অনেক বেশি।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে মোট ৪লাখ ৯৫ হাজার ৪১৫টি মামলা রয়েছে। বিচারিক আদালতে দেওয়ানি মামলা ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩৬টি। ফৌজদারি মামলা ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৯টি সহ মোট সংখ্যা ২৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৫টি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের বিচারকের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০৭ জন, কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ জন, ভারতে ১৮ জন বিচারক রয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে ১০ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১০ জন বিচারক রয়েছেন। এত অল্পসংখ্যক বিচারক দিয়ে মামলার জট কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আদালতে মামলার জট কমাতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে সরকার খুবই আন্তরিক। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।