31 C
Dhaka
সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
আবহাওয়া জেলার সংবাদ প্রচ্ছদ

বন্যায় চার জেলায় ৮ জনের মৃত্যু

টানা ভারী বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এর মধ্যে চার জেলায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

চলমান বন্যায় কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন বন্যার পানিতে তলিয়ে, একজন বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং একজন মাথায় গাছ পড়ে মারা গেছেন।

মৃতরা হলেন- নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর এলাকার কেরামত আলী (৪৫), কুমিল্লা শহরের ছোট এলাকার কিশোর রাফি (১৫), চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৪) এবং লাকসামে পানিতে তলিয়ে মারা যাওয়া শিশুর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী জানান, বুধবার রাতে মাছ ধরতে গিয়ে স্থানীয় একটি সেতুর নিচে তলিয়ে যান নাঙ্গলকোটের দাউদপুর এলাকার কেরামত আলী। প্রবল স্রোতে হারিয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি (১৫) নামে কুমিল্লা নগরের এক কিশোর মারা যায়। কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক যোবায়ের হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামের এক প্রবাসী মারা যান। বুধবার সকালে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সোনাকাটিয়া (আদর্শ গ্রাম) পূর্বপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত সোমবার বিকেলে সোহরাব হোসেন নামে এক আইনজীবী বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে বের হলে বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে তিনি মারা যান। কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কক্সবাজারে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- রামু উপজেলার সাচিং মারমা (২৬) ও আমজাদ হোছন (২২)।

এদিকে ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ।

রামু উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, পশ্চিম বোমাংখিল, জুমপাড়া, পাতালবরপাড়া, রাজঘাট, জাউচপাড়া, মরিচ্যাচার, জুমছড়ি, পূর্বজুমছড়ি, মইন্যাকাটা, পূর্ববোমাংখিল, বোমাংখিল ও মাঝিরকাটার একাংশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

রামুর বাসিন্দা রোমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে রামুর বিভিন্ন নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

রামু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে রামুর বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

ঈঁদগাও উপজেলার ইসলামাবাদ, পোকখালী ও ইসলামপুর এলাকার মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভেসে গেছে মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার।

যুব রেড ক্রিসেন্টের টিম লিডার আজিজুল ইসলাম আরজু বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তারা রান্না করতে পারছেন না। এই মুহূর্তে ত্রাণ তৎপরতা দরকার।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম ও শুকনো খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে একজন মারা গেছেন। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়টি বিষয়টি জানিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যায় কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজারের ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭  লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরচন্দ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সুর্বণা আক্তার বীরচন্দ্রপুর গ্রামের পারভেজ মিয়ার স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাত থেকে আখাউড়ায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। বুধবার সকাল থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে পুরো স্থলবন্দর এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। এত বন্ধ হয়ে যায় বন্দরের যাত্রী পারাপার ও আমদানি-রপ্তানির কাজ।

পাহাড়ি ঢলের পানি গ্রামেও ঢুকে পড়েছে। পানি সুবর্ণাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। সুবর্ণার ভাই তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে তার প্রথম সন্তানকে ঘর থেকে রাস্তায় রেখে আসতে যান। পরবর্তীতে সুবর্ণাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। তবে সুবর্ণা তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পানিতে পড়ে ডুবে যান। পরে তার ভাই ও স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন জানান, সুবর্ণাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। স্বজনরা জানিয়েছেন তিনি পাহাড়ি ঢলের পানিতে পড়ে গিয়ে ডুবে যান। তবে হাসপাতালে আনার আগেই সুবর্ণার মৃত্যু হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে পরিবারের কাছে চাওয়া হয়েছিল ২ লাখ টাকা

banglarmukh official

ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জনকে থানায় সোপর্দ

banglarmukh official

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ

banglarmukh official

দক্ষিণ কোরিয়ায় সাগরে ডুবে নরসিংদীর ২ যুবকের মৃত্যু

banglarmukh official

২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল, থামবে কাজীপাড়া

banglarmukh official

অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না: তারেক রহমান

banglarmukh official