এপ্রিল ২৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অপরাধ জেলার সংবাদ নারী ও শিশু প্রশাসন

২৪ বছর ধরে কাঁদছেন ইয়াসমিনের মা

 

আজ ২৪ আগস্ট ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস। ১৯৯৫ সালের এই দিনে কিশোরী ইয়াসমিনকে (১৪) তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে কিছু বিপথগামী পুলিশ সদস্য। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরের মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। গুলিতে নিহত হন পাঁচজন। ওই সময় থেকেই প্রতিবছর সারাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে। তবে ঘটনার ২৪ বছর পার হলেও একমাত্র মেয়েকে হারানোর বেদনা আর দুঃখ নিয়ে কাঁদছেন ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগম। আর কোনও মায়ের কোল যাতে এভাবে খালি না হয়, সেই কামনা করেন তিনি। নারী নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন সন্তানহারা এই মা।

দীর্ঘদিন পর মা’কে দেখার জন্য আকুল হয়ে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে বাড়ি ফিরছিল গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত ইয়াসমিন। দিনটি ছিল ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট। কিন্তু দিনাজপুরের কোচে না উঠতে পেরে সে পঞ্চগড়গামী একটি কোচে উঠে পড়ে। কোচের লোকজন তাকে দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় নামিয়ে সেখানকার একটি চায়ের দোকানে জিম্মায় দিয়ে যায়। ওই চায়ের দোকানে একটি পুলিশের ভ্যান এসে জোর করে তুলে নিয়ে যায় ইয়াসমিনকে। দিনাজপুর শহরে মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে পুলিশের সদস্যরা তুলে নেয় তাকে। কিন্তু ভ্যানের মধ্যেই কিশোরী ইয়াসমিনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে তারা। পরে তার লাশ রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরের দিন লাশ পেয়ে প্রথমে দশমাইল এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। পরে তা ধীরে ধীরে আন্দোলনে রূপ নেয়। পুলিশের এই বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে দিনাজপুরের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে দমাতে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন পাঁচজন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন অনেকে। পরে আন্দোলনের মুখে বিচার শুরু হয়। জড়িত তিন পুলিশ সদস্যের ফাঁসির রায় হয় ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট। ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে রায় কার্যকর হয়।
ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগম

তবে সন্তানের ওপর নৃশংসতা ও তাকে হারানোর কথা মনে করে এখনও প্রতিনিয়ত কেঁদে চলেছেন তার মা শরিফা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার সারাজীবন জুড়ে মেয়েকে নিয়েই কষ্ট। এই দুঃখ ভোলার মতো না। আর যাতে কোনও মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়, সেই কামনা করি। এখনও যেসব নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, সেসব ঘটনার যেন সুষ্ঠু বিচার হয়। যাতে করে কেউ নারী নির্যাতন করতে সাহস না পায়।’ মেয়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবেন বলেও জানান তিনি।

সেদিনে আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিল মহিলা পরিষদ। দিনাজপুর মহিলা পরিষদের সভাপতি কানিজ রহমান জানান, ‘ইয়াসমিনের ওই ঘটনার পরও এখনও এই জেলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, শিক্ষকের হাতে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। একের পর এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে পূর্বের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায়। আমরা চাই ইয়াসমিনের ঘটনার মতো সব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। প্রশাসনের পাশাপাশি সব স্তরের মানুষ এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে নারী নির্যাতন শব্দটিও একদিন হারিয়ে যাবে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

শিশু আছিয়ার জানাজায় অংশ নিতে মাগুরায় মামুনুল-হাসনাত-সারজিস

banglarmukh official

অটোরিকশায় ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ, ভিডিও ভাইরাল

banglarmukh official

বগুড়ায় স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধ করে হত্যা

banglarmukh official

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ: ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ হাইকোর্টের

banglarmukh official

বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার শিশু, ভগ্নিপতি ও শ্বশুর আটক

banglarmukh official