আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শ্রমিক নেতা ও কাউন্সিলরের ধস্তাধস্তি, ভিডিও ভাইরাল পুলিশ বলছে আগ্নেয়াস্ত্রের অনুকূলে প্রদর্শিত কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
এর আগে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বরিশাল সদর ভূমি কমিশনার কার্যালয়ের সামনে পোর্টরোড থেকে মর্তুজাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
৫৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বরিশাল নগরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এ কে এম মর্তুজা আবেদীনের হাতে একটি পিস্তল রয়েছে। তিনি যে অটোরিকশার মধ্যে রয়েছেন, সেখানে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্নাসহ আরও এক যুবক রয়েছেন। তারাসহ অটোরিকশার বাইরে থেকে মান্নার অনুসারী কয়েকজন মিলে পিস্তলটি ধরে টানা-হেঁচড়া করছেন।
ওই ভিডিওর শুরুতে কেউ একজন বলেন ‘ভিডিও ভিডিও কর’। এরপর মান্নাকে কয়েকবার চিৎকার করে বলতো শোনা যায়, ‘আমাকে মারার জন্য অস্ত্র বের করছে দেখ’। আর এ সময় মর্তুজা কয়েকবার চিৎকার করেন ‘দেখ ও দেখ ছেমড়া’ বলতে শোনা যায়। শেষে মান্না ‘অস্ত্রটা নে’ বললে এক যুবক মর্তুজার হাত থেকে অস্ত্রটি ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এ সময় মর্তুজা বলেন, ‘এ অস্ত্রটি আমার লাইসেন্স করা অস্ত্র’। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা গিয়ে ওই যুবকের কাছ থেকে তাদের জিম্মায় আগ্নেয়াস্ত্রটি নিয়ে নেন।
স্থানীয় ও প্রতক্ষদর্শীরা জানান, ভূমি অফিস কম্পাউন্ড বা তার মধ্যে কি হয়েছে সেটা বলতে পারবো না। ওই অটোরিকশা ঘিরে আকস্মিক চিৎকার শুনে যখন সবাই সেদিকে ছুটে যায় তখন গিয়ে দেখতে পাই একটি পিস্তল নিয়ে সবাই টানাটানি করছে। এতে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেলে পিস্তলটি ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দ্রুত তাদের জিম্মায় নেয় এবং সেসঙ্গে অ্যাডভোকেট মর্তুজাকে হেফাজতে নেন।
অ্যাডভোকেট মর্তুজা আবেদীন পিস্তলটি লাইসেন্স করা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি এসি ল্যান্ড অফিস থেকে বের হতে অবস্থায় মান্না এসে জিজ্ঞাস করে আমার বউকে মারছো কেন? কিন্তু এ ধরনের কোনো ঘটনাই আমার জীবনে নেই। এ কথা নিয়ে বাকবিতণ্ডার পর তারা কয়েকজনে মিলে আমাকে মারধর করে। একপর্যায়ে আমার কোমড়ে থাকা লাইসেন্স করা রিভলবার থাবা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন কোমর থেকে রিভলবার নিজের হাতে নেই যাতে ওরা নিয়ে যেতে না পারে। এরপর মারতে মারতে আমাকে একটি অটোরিকশার মধ্যে নিয়ে যায়। তখন এক ট্রাফিক পুলিশের সদস্য এলে তাকে পিস্তলটি নিতে বলি, সে নেওয়ার আগেই একটি ছেলে সেটি নিয়ে যায়। তারপর ওই পুলিশ সদস্য ওই ছেলের কাছ থেকে পিস্তলটি নিজের জিম্মায় নেন।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্না বলেন, ‘আমার বাসার একটি জমি নিয়ে ঝামেলা ছিল, যার কারণে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের সঙ্গে কথা বলতে আজ সেখানে যাই। ভূমি অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় যাবার জন্য রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। ওই মুহূর্তে পেছন থেকে মর্তুজা এসে আমার পেছনে দাঁড়ায় এবং আমাকে বলেন- ‘তুই এখনও বাইচ্চা আছো- তোর তো বাইচ্চা থাকার কথা না’। তখন আমি বলছি- ‘এ ব্যাডা ক্যা? আমি বাইচ্চা থাকমু না ক্যা-আল্লাহ না মারলে কেউ মারতে পারে’। এ কথায় সেখানে চিল্লাচিল্লি হইছে। এরপরও ওহ (মর্তুজা) একটু সামনের দিকে এগিয়ে গালাগালি করতে থাকেন, আমিও একটু সামনের দিকে আগাইছি। এরপর তিনি হঠাৎ পিস্তল বের করে। এ সময় সেখানে থাকা সাধারণ শ্রমিকরা তাকে আটক করছে। ’
তিনি বলেন, পিস্তলটি তার কোমরে ছিল। বৈধ না অবৈধ সেটাও বলতে পারবো না। নিজের আত্মরক্ষার্থে সেটা আমি ও ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যও ধরেছি, আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও এর প্রমাণ পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, অ্যাডভোকেট মর্তুজা আবেদীনকে নগরের পোর্টরোডের স্বাগতম হোটেলের সামনে জনগণের কাছ থেকে পিস্তলসহ আমাদের হেফাজতে নিয়ে এসেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি, সেসঙ্গে পিস্তলটির কাগজপত্র কি রয়েছে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সেসঙ্গে ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বরিশাল সিটি করপোরেশনের দুই নম্বর ওয়ার্ডে ২৫ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মর্তুজা আবেদীন। গত সিটি নির্বাচনে তার এ ওয়ার্ডে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তৎকালীন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্না। কিন্তু প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় সেখানে নির্বাচনে মান্নার ভাই মুন্না হাওলাদার অংশগ্রহণ করেন। আর ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।