33 C
Dhaka
অক্টোবর ২২, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ ঢাকা

আশুলিয়ায় শ্রমিক-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫

শিল্পাঞ্চলের আশুলিয়ায় বকেয়া বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে কাউসার নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চারজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনায় শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমসহ যৌথ বাহিনীর কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জিরাবো এলাকার মণ্ডল গ্রুপের কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই শ্রমিকের নাম কাউসার হোসাইন খান (২৭)। তিনি আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার ম্যাঙ্গো টেক্স লিমিটেড কারখানার শ্রমিক। দুপুর ২টার দিকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মো. ইউসুফ আলী।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা এটাই প্রথম।

প্রাথমিকভাবে আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবীব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান। আহত অন্যান্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। গুলিবিদ্ধ দুজন শ্রমিককে পিএমকে হাসপাতাল ও দুজনকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, সকালে মণ্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালিকপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্রিপক্ষীয় মিটিং চলছিল। এ সময় সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেন। পরে অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করেন। শ্রমিকরা র‍্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গুলি চালায়। এ সময় ৫ জন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হলে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতাল ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এনাম মেডিকেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শ্রমিক কাউসার হোসাইন খানকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, আমাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে আনা হয়। এদের মধ্যে কাউসার মারা গেছেন। বাকি দুজনের চিকিৎসা চলছে।

ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক সুমন বলেন, সকালে তাদের কারখানায় সবাই কাজ করছিল। তাদের কারখানায় কোনো ধরনের আন্দোলন হয়নি। তবে মণ্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে তাদের শ্রমিকরা সংহতি জানিয়ে মণ্ডল গ্রুপের কারখানার সামনে যান। সেখানে আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যোগ দেন। এ সময় শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে গুলি ছুড়লে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে আমি তাদের মধ্যে দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এছাড়া প্রায় ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পিএমকে হাসপাতালের অ্যাডমিন ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে ৪ জন শ্রমিককে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের পায়ে গুলি লেগেছে। তাদের চিকিৎসা চলছে।

এ ব্যাপারে ন্যাচারাল ডেনিম কারখানার এইচআর অ্যাডমিন সবুজ হাওলাদার বলেন, আমাদের কারখানায় কোনো সমস্যা ছিল না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছিল। হঠাৎ শ্রমিকদের কাছে গুজব আসে পাশের মণ্ডল গার্মেন্টসের শ্রমিক মারা গেছেন। এটা শুনেই সব শ্রমিক একসঙ্গে কারখানা থেকে বেরিয়ে মণ্ডল গার্মেন্টসের সামনে চলে যান। পরে ওখানে কী ঘটেছে আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে সকালের দিকে পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় অবরোধ করে এই বিক্ষোভ শুরু করে বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। ২৮ আগস্ট থেকে আশুলিয়ার বুড়িবাজার এলাকার বার্ডস গ্রুপ বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। সোমবার শ্রমিকদের সকল পাওনাদি পরিশোধের কথা থাকলেও মালিকপক্ষ তা করেনি। এরই প্রতিবাদে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে যান চলাচল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অবরোধের কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকে সড়কের যান চলাচল।

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় সোমবার খোলা দেখা গেছে অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা। এর মধ্যে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় ১১টি, ও সাধারণ ছুটির কারণে ৭টিসহ মোট ১৮টি কারখানা বন্ধ রয়েছে।

শিল্প পুলিশ বলছে, যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে, শিল্পাঞ্চল ঘিরে রয়েছে যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে পুলিশ, আর্মস পুলিশ, শিল্প পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যদের তৎপরতা।

সম্পর্কিত পোস্ট

আশুলিয়ায় আজও পোশাক শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, যানজট

banglarmukh official

যমুনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার, ১৬ জেলের কারাদণ্ড

banglarmukh official

রেললাইনে মিলল গৃহবধূর লাশ

banglarmukh official

মধ্যরাতে বিস্ফোরণে কাঁপল টেকনাফ সীমান্ত

banglarmukh official

দ্বিতীয় বিয়ে করায় প্রথম স্ত্রীর হাতে ইমাম খুন

banglarmukh official

যেসব স্থানে স্বল্পমূল্যে বিক্রি হচ্ছে আলু-ডিমসহ ১০ কৃষিপণ্য

banglarmukh official