প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ পরপর দু‘বার সরকার গঠনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পূর্বে ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অনেক তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা যায়, পরোক্ষভাবে দেশি ও বিদেশি কিছু লোক ও সংস্থা বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এজন্য জাতির পিতাকে হত্যার অন্যান্য পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার সংসদের ২২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সদস্য মো. আবদুল্লাহর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে এবং আশ্রয় গ্রহণ করেছে, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। কানাডায় বসবাসরত পলাতক আসামি নূর চৌধুরীর তথ্য দিতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিস-এর আদালতে আবেদন করা হয়েছে। পলাতক রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক ও আইনি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়াদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে
জাতীয় পার্টির নূরে হাসনাত লিলি চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ড্রাইভারের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়াদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে এটি থামবে। তাছাড়া এটি থামবে না। এছাড়া ট্রাফিক নিয়মটা স্কুল থেকে শিখানো উচিত।
শিশু আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতবড় একটি ঘটনা ঘটল, আন্দোলন হল তারপরও আমরা দেখি মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা নেই। তারা যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এক ছবির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এক বাবা তার শিশু সন্তানকে নিয়ে এমন ভাবে রাস্তা পার হচ্ছিলেন বাবার পা একটু পিছলে গেলেই ফেন্সের সরু মাথা তার শরীরে গেঁথে যাবে। কেউ রাস্তা পার হতে একটা মিনিট সময় নিবে না, অথবা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবে না। এই বিষয়টিও সবার দেখা দরকার।
তিনি আরো বলেন, সড়কের দুঘর্টনা দূর করার জন্য আমরা যতই পদক্ষেপ নিই না কেন, আমাদের দেশের মানুষের অদ্ভুত মানসিককতা -তারা রাস্তা পারাপারের সময় হাত দেখায়। দ্রুতযান হাত দেখানোর সাথে সাথে থেমে যেতে পারে না। কিন্তু আমরা কি দেখি, ছোট্ট শিশুর হাত ধরে মা রাস্তা পার হচ্ছেন। অথবা বাবা বাচ্চাদের নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। রাস্তায় অনবরত গাড়ি আসছে অথচ খুব কাছেই ফ্লাইওভার থাকলেও এভাবে পার হচ্ছেন। এমনকি যুব ছেলেমেয়েরাও এ কাজ করছেন। ফ্লাইওভার দিয়ে পার না হয়ে দৌঁড় মেরে পার হতে চায়। তার ফলে এক্সিডেন্ট হয়। আর এক্সিডেন্ট হলে যারা রাস্তা পারাপার হচ্ছে তাদের দোষ কতটুকু আর ড্রাইভারের দোষ কতটুকু সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, আরেকটি বিষয় আমি দেশবাসীকে বলব সেটা হল, কোন একটি এক্সিডেন্ট হলে ড্রাইভার তখন নিজের জীবন বাঁচাতে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে যার বাঁচার সম্ভাবনা সেও আর বাঁচে না। ড্রাইভার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কারণ যে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল তাকে সাহায্য করার চেয়েও বেশি আগ্রহ হয়ে যায় ড্রাইভারকে টেনে নামিয়ে কীভাবে মারধর করা যায় এবং মারতে মারতে এমনও ঘটনা ঘটে যায় মেরেই ফেলে। আইন কারো হাতে তুলে নেয়া উচিত নয়। ধরে পুলিশে দিবে, কিন্তু কেউ মারধর করতে পারবে না। এই মারধর যদি বন্ধ হয়ে তাহলে অনেক এক্সিডেন্টে কিন্তু মানুষ বেঁচে যায়। এটি হল বাস্তবতা। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে পারাপারের সময় সকলকেই ট্রাফিক আইনটা মেনে চলা উচিত।
পৃথিবীর সব দেশের রাজধানীতে যানজট রয়েছে
বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর সব দেশের রাজধানী শহরেই যানজটের সমস্যা রয়েছে। যানজট সমস্যা সমাধান ও সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা শহরের চারদিকে রিং রোড করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এছাড়া রিং রোড এলিভেটেডেট করা হবে। যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকল্পে এলিভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এছাড়া চার বছর মেয়াদী ন্যাশনাল রোড সেইফটি এ্যাকশান প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের ১২১টি দুর্ঘটনা প্রবণ স্থানে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ৪ হাজার ৩৬৭ কিলোমিটার ফ্লাইওভার এবং ওভারপাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, মহাসড়কে বাসের সর্বোচ্চ গতি ৮০ ও ট্রাকের সবোর্চ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার এবং অতিরিক্ত ওজন সীমার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে এলেক্স রোড কন্ট্রোল স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালে সারাদেশে ২ লাখ ৭৭৯টি যানবাহন ও ৮১ হাজার ৪৬৮ জন চালকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।