বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মঙ্গলবার রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ১৫৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারটি বাস এবং বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।
রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহত হওয়ার ঘটনা স্বীকার করেছেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, নগরের বাংলাবাজার এলাকার ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরী জোয়ার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে প্রতিবেশী এক পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।
সোমবার রাতে বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী সমন্বয়ক পরিচয়ে সেই বিরোধ নিরসনে জোয়ার বাড়ি গেলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। সে সময় জোয়া সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন। এরপর তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা এলে বিএম কলেজের সেই শিক্ষার্থীরা তাদের মারধর করেন।
এ ঘটনায় জোয়া গতকাল বরিশাল কোতোয়ালি থানায় অমি, মোস্তাফিজুর রহমানসহ চার যুবকের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার মানববন্ধন করেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওদিকে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাতের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে গতরাত ১০টার দিকে নগরীর বটতলা এলাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজির অভিযোগে মারধর করেন।
এরপর রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে ঘটনাস্থলে যান। সে সময় বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং চালকসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে মারধর করেন।
এসব ঘটনার সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা-ভাঙচুর চালান।
তারা রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবন, তিনটি হল এবং শ্রেণিকক্ষ ভাংচুর করেন। পরে ক্যাম্পাসজুড়ে ভাংচুর করেন ববি শিক্ষার্থীরা।
রাত পৌনে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ১ ঘন্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তারা। এক সেনাসদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তার সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
তবে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টার পর পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে সকাল ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিএম কলেজ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।
বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, পারিবারিক বিষয় নিয়ে যে সংঘর্ষ হয়েছে তা মেনে নিতে পারছি না। এ ঘটনায় আমাদের প্রায় ৪৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ববি শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে আটকে রেখেছিল বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে নিখোঁজ ছয় শিক্ষার্থীকে বুঝে পেয়েছেন ভারপ্রাপ্ত ভিসি ড. মো. মুহসীন উদ্দীন। বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি মুহসীন উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি যৌথ বিবৃতি বুধবার সকালে এ প্রতিবেদকের হাতে আসে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে বুঝে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বিএম কলেজে ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছয় শিক্ষার্থীকে বিএম কলেজে হামলার সময় আটক হয়। কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদে তাদের আটকে রাখা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. উন্মেষ রায় জানান, হামলায় আহত হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৩৩ জন হাসপাতালে ভর্তি।
সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বরিশালের সাধারণ মানুষ। তাদের আশঙ্কা, এ ঘটনা অনেক দূর গড়াবে।