৫০ বছরের নিচে প্রতি এক হাজার মানুষ যারা কিনা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে, তাদের প্রায় কেউই মারা যায়নি। আবার পঞ্চাশ থেকে ষাটের শুরুর দিকে যাদের বয়স তাদের মাঝে পাঁচজন করে মারা গেছে, যেখানে আবার নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। এই ঝুঁকি-কাঁটা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। যাদের বয়স সত্তরের মাঝামাঝি কিংবা তার চেয়ে বেশি সেসব করোনা আক্রান্তদের মাঝে প্রায় ১১৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এগুলো কভিড-১৯-এ মৃত্যুঝুঁকিতে থাকার বিষয়ে করা কয়েকটি বিশদ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান।
মহামারীর শুরুর দিকেই করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সঙ্গে বয়সের সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। একদল গবেষক স্পেন, ইংল্যান্ড, ইতালি ও সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সাধারণ জনগণের মাঝে সার্স-কোভ-২-এর বিপরীতে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সন্ধান করেছে, তারা এখন ঝুঁকির পরিমাণও নির্ধারণ করেছে।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মার্ম কিলপাট্রিক বলেন, নির্দিষ্ট একটি পরিসরে নির্দিষ্ট জনসংখ্যার ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা জানতে চাইলে এটি আমাদের আরো বেশি তীক্ষ্ণ ধারণা দেয়।
এ গবেষণা বলছে, এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকির ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী নির্ধারকটি হচ্ছে বয়স—একটি মেট্রিক যা সংক্রমণের মৃত্যুহার হিসেবে পরিচিত (আইএফআর), যা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তিদের অনুপাত। এখানে যাদের পরীক্ষা করা হয়নি বা লক্ষণ দেখা যায়নি এবং ফলস্বরূপ যারা মারা গেছে তারাও অন্তর্ভুক্ত।
অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু লেভিন বলেন, কভিড-১৯ কেবল বয়স্ক লোকদের জন্যই সমস্যার না। এটা মধ্য পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের ঘরে থাকা মানুষদের জন্য মারাত্মকভাবে ভয়ংকর। তবে বয়স সবকিছুর ব্যাখ্যা দেয় না বলে মন্তব্য করেছেন এপিডেমিওলজিস্ট হেনরিক সালজে। ঝুঁকি নির্ধারণের ক্ষেত্রে লিঙ্গও একটি বড় ফ্যাক্টর। যেখানে নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার দ্বিগুণ বেশি। বয়স্ক লোকদের মৃত্যুঝুঁকির ক্ষেত্রে দেশে দেশে যে ভিন্নতা তা নির্ভর করছে বাজে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, হেলথ কেয়ার সিস্টেমের সক্ষমতা এবং বয়স্কদের থাকার জায়গায় ভাইরাস সংক্রমিত করেছে কিনা তার ওপর।
বয়স্ক মানুষেরা অধিক ঝুঁকিতে কিনা তা অনুমান করার জন্য গবেষকরা ব্যবহার করেছে বিস্তৃত অ্যান্টিবডি পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত ডাটা।
জুন ও জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে করা একটি সমীক্ষায় প্রতি এক হাজার জনে নয়জনের মৃত্যুর একটি হিসাব পাওয়া যায়। সেখানে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের মাঝে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল শূন্যের কাছাকাছি। যা ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সীদের মাঝে ৩.১ শতাংশে এবং বয়স্ক যে কারো জন্য সেটি ছিল ১১.৬ শতাংশ।
স্পেনে করা একই রকম একটি গবেষণায় আইএফআর ছিল ০.৮ শতাংশ কিন্তু ৫০ বছর বয়সের নিচে থাকা মানুষের জন্য এটি ছিল শূন্যের কাছাকাছি। ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষদের জন্য এ হার ছিল ১১.৬ শতাংশ এবং একই বয়সের নারীদের জন্য এটি ছিল ৪.৬ শতাংশ। এই ফল স্পষ্টভাবেই বলছে, করোনায় পুরুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা নারীর চেয়ে বেশি। বয়সের সঙ্গে এ পার্থক্য বাড়তে থাকে।
এপিডেমিওলজিস্ট বিয়েত্রিজ পেরেজ-গোমেজ বলেন, পুরুষরা নারীদের চেয়ে দ্বিগুণ ঝুঁকিতে রয়েছে।
পুরুষ ও নারীর ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়ায় যে পার্থক্য তা বিবিধ ঝুঁকি ব্যাখ্যা করতে পারে, বলেছেন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ডেমোগ্রাফার জেসিকা মেটকাফ। তিনি বলেন, মহিলাদের ইমিউন সিস্টেম কিছুটা আগেই রোগজীবাণু চিহ্নিত করতে পারে।
ভাইরাসের বয়স্কদের অধিক মৃত্যুর বিষয়টিও ইমিউন সিস্টেম দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। বয়সের অনুসারে এটি নিম্ন স্তরের প্রদাহ প্রদর্শন করে। কভিড-১৯ অতিরিক্ত ব্যবহূত ইমিউন সিস্টেমটিকে আরো বেশি ধাক্কা দিতে পারে। কভিড-১৯-এর বাজে ফলাফলগুলো ইমিউন প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।
ইংল্যান্ডের গবেষণায় জাতিগত পার্থক্যগুলোকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। মৃত্যু ও মারাত্মক অসুস্থতার পরিসংখ্যান বলছে, ইংল্যান্ডে কালো এবং দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা অনেক বেশি।
গবেষকদের মতে, আইএফআর দেশের ভিত্তিতেও আলাদা আলাদা হয়, বিশেষ করে ৬৫ বা তার বেশি বয়সী মানুষদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে। এপিডেমিওলজিস্ট অ্যান্ড্রু আজমানের মতে, এ পার্থক্যের পেছনে অনেকগুলো ব্যাখ্যা থাকতে পারে। যেসব দেশে কো-মরবিডিটি হার বেশি যেমন ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হূদরোগ রয়েছে তাদের আইএফআরও বেশ উচ্চ হয়ে থাকে।