এপ্রিল ২৬, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

অশ্লীল গালাগাল ও মুমিনের করণীয়

অন্যকে গালি দেওয়া বা অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা কোনো মুমিনের কাজ হতে পারে না। মুমিন তো ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে গেলেও মার্জিত ভাষায়, ভদ্র ও সংযতভাবে শোকজ করে। কিন্তু কিছু মানুষ রাগান্বিত হলে অন্যকে অশ্লীল ও শ্রুতিকটু বাক্যবাণে নাজেহাল করে। অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে।

আমরা সাধারণত পান থেকে চুন খসলেই মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসি। অন্যকে দোষারোপ করি, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করি। এ ধরনের কাজ একজন মুমিনের জন্য কখনো শোভা পায় না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালাগালকারী হয় না। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৪৩)

ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যকে গালি দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। আর তা যদি হয় বিনা অপরাধে, তাহলে তা আরো জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা বিনা অপরাধে ঈমানদার পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে। (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি [আল্লাহর অবাধ্য আচরণ] এবং তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৫, ৭০৭৬; তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৩)। তাই আমাদের উচিত মানুষের সঙ্গে মার্জিত ভাষায় কথা বলা, ঝগড়া এড়িয়ে চলা। কেউ খারাপ ব্যবহার করলেও নিজেকে সংযত রাখা। কারণ এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাগিবতণ্ডায় লিপ্ত হলে তা লড়াই ঝগড়ায় গড়ানো স্বাভাবিক। কিন্তু হাদিসে এ ধরনের ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে কঠোর  হুঁশিয়ারি এসেছে।

অনেকে আবার সাধারণ বিষয়েও মা-বাবা তুলে গালি দিয়ে বসে। কিছু কিছু পেশায় এ ধরনের শব্দ ব্যবহার না করলে নাকি অধস্তনদের কন্ট্রোলে রাখা যায় না। তারা তাদের অধীনদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথা বলার সময়ও সঙ্গে কিছু অশ্লীল গালি জুড়ে দেয়। অথচ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করে মানুষকে গালি দেওয়া জঘন্য অপরাধ। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘কবিরা গুনাহগুলোর একটি হলো নিজের মা-বাবাকে অভিশাপ করা।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আল্লাহর রাসুল! মানুষ নিজের মা-বাবাকে কিভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, ‘যখন সে অন্যের বাবাকে গালাগাল করে, তখন সে নিজের বাবাকেও গালাগাল করে থাকে। আর যে অন্যের মাকে গালি দেয়, বিনিময়ে সে তার মাকেও গালি দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭৩, তিরমিজি, হাদিস : ১৯০২)

আমাদের উচিত কারো সঙ্গে এমন ব্যবহার করে ফেললে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। কারণ মানুষের সঙ্গে অশোভনীয় আচরণ করা ও তার সম্মানহানি করা জুলুম। কঠিন কেয়ামতের দিন ক্ষুদ্র একটি জুলুমও মানুষকে জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার (কোনো মুসলিম) ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করেছে অথবা কোনো বিষয়ে জুলুম করেছে, সে যেন আজই (দুনিয়াতে) তার কাছে (ক্ষমা চেয়ে) হালাল করে নেয়—ওই দিন আসার আগে, যেদিন দিনার ও দিরহাম কিছুই থাকবে না। তার যদি কোনো নেক আমল থাকে, তবে তার জুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তা থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার কোনো নেকি না থাকে, তবে তার সঙ্গীর পাপরাশি তার (জালেমের) ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৯৩৩২)

তাই আমাদের সবার উচিত এ ধরনের অশ্লীল কাজ ত্যাগ করে মহান আল্লাহর দরবারে তওবা করা। মানুষকে সম্মান করা। সে যে-ই হোক, ছোট হোক কিংবা বড়। সবার সঙ্গেই মার্জিত আচরণ করা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official