28 C
Dhaka
অক্টোবর ২৩, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জেলার সংবাদ ঝালকাঠি প্রচ্ছদ

আমু ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক, আলোচনায় তার পালিত মেয়েও

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঝালকাঠিতে বিএনপি নেতাদের দায়ের করা প্রথম তিনটি মামলায় আসামি করা হয়নি সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুকে। ১৪ দলের এই সমন্বয়ক ঝালকাঠিতে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক।

অর্থবিত্তে ঠিক কতটা ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন সাবেক এমপি আমির হোসেন আমু তা জানা সম্ভব না হলেও তার সঙ্গে থাকা ছোট নেতারাও বনে গেছেন কোটিপতি। ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত দোর্দণ্ড প্রতাপে ঝালকাঠি শাসন করা এই আওয়ামী লীগ নেতার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানে না কেউ। তার বিত্তের ভান্ডার দেখাশোনা করা ফখরুল মজিদ কিরনও আত্মগোপনে। সম্পর্কে ভায়রা এই কিরনের মাধ্যমেই ঠিকাদারি আর চাকরিসহ সব সেক্টর থেকে পার্সেন্টেজ আদায় করতেন আমু। যার সর্বশেষ চালানের পাঁচ কোটি টাকা ৫ আগস্ট রাতে উদ্ধার হয় ঝালকাঠি শহরের রোনালস রোডে থাকা সাবেক এই মন্ত্রীর বাসভবন থেকে। ওই ঘটনায় সেফ্র একটি সাধারণ ডায়রি করা ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৩৫ দিনেও।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমুর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস কখনোই পায়নি কেউ। মৃদু প্রতিবাদেও ধ্বংস হয়ে যেত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। কেবল আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি নেতারাও ভয়ে কখনো কথা বলত না তার বিরুদ্ধে। যেন সবার কাছেই জ্যান্ত আতঙ্ক ছিলেন ১৪ দলের সমন্বয়ক এই নেতা। হাসিনা সরকারের পতনের পর ঝালকাঠিতে বিএনপি নেতাদের করা প্রথম তিনটি মামলায় আসামি করা হয়নি তাকে। বিষয়টি নিয়ে কথা উঠলে ২ সেপ্টেম্বর দায়ের হওয়া সর্বশেষ মামলায় অনেকটা দায়সারাভাবে অন্তর্ভুক্ত হয় তার নাম। তাও সেই মামলার বাদী হননি বিএনপির দায়িত্বশীল কেউ।

পরিচয় না প্রকাশের শর্তে ঝালকাঠির একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘ক্ষমতার আমল কেবল নয়, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও আমু প্রশ্নে নেতিবাচক কিছু বলার সাহস পেত না কেউ। অথচ ঝালকাঠিতে হেন দুর্নীতি নেই যা করেননি এই নেতা। সব দপ্তরের ঠিকাদারি কাজে নির্দিষ্ট অঙ্কের পার্সেন্টেজ দিতে হতো তাকে। টিআর কাবিখা আর সংসদ-সদস্যদের নামে বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নিতেন টাকা।’

নলছিটি উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে গত বছর নৈশপ্রহরী, অফিস সহকারী ও আয়া পদে তিনজন লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে আমির হোসেন আমুর নির্ধারিত প্রতিনিধিকে। কেবল আমি নই, সব বিদ্যালয়সহ সব ধরনের নিয়োগেই ছিল একই নিয়ম।’

ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যত ধরনের ঠিকাদারি টেন্ডার, সব ক্ষেত্রেই আমুকে দিতে হতো টাকা। ঠিকাদার নির্বচান প্রশ্নেও তার সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। ই-টেন্ডার চালু হওয়ার পরও নানা কৌশলে টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। কথা না শুনলে কেবল বদলি নয়, শারীরিক মানসিকভাবেও হতে হতো হেনস্তা।’ সড়ক বিভাগের মতো এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর, গণপূর্ত, থানা প্রকৌশলী এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগসহ সব ক্ষেত্রেই ছিল একই অবস্থা।

বেপরোয়া এই অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে গত ১৬ বছর ধরে শত শত কোটি টাকা আয় করলেও দেশে আমির হোসেন আমুর তেমন কোনো সম্পদের সন্ধান মেলেনি। ঝালকাঠির রোনালস রোডে ভবন, বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডে প্রাসাদসম আলীশান বাড়ি এবং রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে বেশ বড়সড় একটি বাগানবাড়ি রয়েছে তার।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর তেমন একটি ভরসা ছিল না তার। অথবা এমনও হতে পারে যে ব্যাংকে গেলে ছিল ধরা পড়ার ভয়। বস্তায় বস্তায় টাকা তিনি রাখতেন বাড়িতে। যার প্রমাণ মেলে ৫ আগস্ট। বিক্ষুব্ধ জনতা ওইদিন হামলা ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয় তার রোনালস রোডের বাড়িতে। ভাঙচুর চলাকালেই বহু মানুষকে দেখা গেছে বাড়ি থেকে বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে বের হতে। তারপরও আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেখান থেকে উদ্ধার করে কয়েক বস্তা ভর্তি টাকা। গোনার পর যার সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ কোটিরও বেশি। একই সঙ্গে উদ্ধার হয় মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা। ঝালকাঠির মতো বরিশাল নগরীতে থাকা আমুর প্রাসাদেও হামলা ভাঙচুর হয় সেদিন। সেখান থেকেও বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিয়ে বের হয় হামলাকারীরা।

যার বাড়িতেই থাকে বস্তা বস্তা টাকা সেই মানুষটার দেশে মাত্র তিনটি বাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই- ভাবতেই যখন খটকা লাগে ঠিক তখনই আলোচনায় আসে তার পালিত মেয়ে সুমাইয়া হোসেনের নাম। ব্যক্তি জীবনে নিঃসন্তান আমু তার শ্যালিকা মেরী আক্তারের কন্যা এই সুমাইয়াকে পালক হিসেবে নেন আরও বহু বছর আগে। বর্তমানে দুবাইতে থাকা এই সুমাইয়ার বিয়েও হয়েছে দুবাই প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সঙ্গে। অবৈধ পন্থায় আয় করা শতকোটি টাকা ওই মেয়ের কাছে পাঠিয়েছেন আমু, এটাই আলোচনা ঝালকাঠি শহরে।

পরিচয় না প্রকাশের শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘এমন কোনো সেক্টর নেই যেখান থেকে টাকা পেতেন না আমু। সব টাকাই নগদে পৌঁছাত তার কাছে। লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে কাজ করতেন ভায়রা ফখরুল মজিদ কিরন। এই কিরনও ছিলেন একটি রহস্যময় চরিত্র।

শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে আমুর এপিএস ছিলেন কিরন। সর্বশেষ সরকারে আমুকে মন্ত্রী করা না হলেও তার সংস্পর্শেই থেকে যান তিনি। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো আমুর পাশাপাশি সদ্য সাবেক সরকারে দায়িত্ব পালন করা শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুনেরও এপিএস ছিলেন কিরন।

ঝালকাঠির বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আলোচিত এই কিরনের বাড়ি ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলায়। সর্বশেষ শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুনের আপন ছোট ভাই কিরন তার নিজের এলাকা বাদ দিয়ে পড়ে থাকতেন ঝালকাঠি। কেবল সম্পদ ভান্ডারের দেখাশোনা আর পার্সেন্টেজ আদায় নয়, নির্বাচনি এলাকায় আমুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতেন তিনি।

পরিচয় না প্রকাশের শর্তে নলছিটি উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমুর সঙ্গে দেখা করতে হলে অনুমতি নিতে হতো কিরনের। উন্নয়নমূলক সব কাজের ভাগ-বাটোয়ারা করতেন তিনি। তার কথার বাইরে বলতে গেলে এক পা-ও চলতেন না আমু। পরিস্থিতি এমন ছিল কিরন যেন ছিলেন আমুর ছায়া। এই কিরনের মাধ্যমেই নির্বাচনি এলাকা থেকে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন আমু। যার প্রায় পুরোটাই এখন দুবাইতে তার মেয়ে সুমাইয়ার কাছে আছে বলে ধারণা সবার। এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য আমু ও কিরনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি কাউকে। মোবাইলে খুদে বার্তা দিয়েও মেলেনি উত্তর।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, সাবেক এমপির বাসা থেকে পাঁচ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় আমরা একটি সাধারণ ডায়রি করেছি। টাকা জমা আছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইনজীবীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, আদালত বর্জন করলেন ম্যাজিস্ট্রেটরা

banglarmukh official

এইচএসসির ফল বাতিল দাবিতে ময়মনসিংহ বোর্ডে শিক্ষার্থীদের তালা

banglarmukh official

রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

banglarmukh official

আশুলিয়ায় আজও পোশাক শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, যানজট

banglarmukh official

যমুনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার, ১৬ জেলের কারাদণ্ড

banglarmukh official

রেললাইনে মিলল গৃহবধূর লাশ

banglarmukh official