শামীম ইসলাম:
০১৬ স্বাধীনতা কাপ। তিন তরুণ উঠে এলেন আলোচনায়। তৃতীয় বিভাগ থেকে সরাসরি প্রিমিয়ারের ক্লাবে নাম লিখিয়ে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালেও তুলে নেন দলকে। আরামবাগের সেই তিন তরুণ তুর্কি জাফর ইকবাল, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও মাহবুবুর রহমান সুফিলের মধ্যে জাফর, আব্দুল্লাহ দুজনই এরপর ডাক পেয়ে গেলেন টম সেইন্টফিটের মালদ্বীপ ও ভুটানগামী দলে। যে ম্যাচ দুটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় লজ্জা। মালদ্বীপের মাঠে ৫-০ এবং ভুটানের কাছে প্রথমবারের মতো ৩-১ গোলের হার।
ত্রয়ীর দুজনের জাতীয় দলে সুযোগ হয়ে যাওয়া, একা পড়ে যাওয়া সুফিলের মধ্যে কি জেদ তৈরি করেছিল কে জানে! পরের ইতিহাস এবং বর্তমানও সিলেটি এই ফুটবলারের সঙ্গী। ঝড়ে গেছেন জাফর, আব্দুল্লাহরা। কে জানত ভুটান ম্যাচের কলঙ্কিত সেই স্কোয়াডে জায়গা না পাওয়া সুফিলই দুই বছর বাদে সেই হারেরই শোধ নেবেন। জাফর, আব্দুল্লাহ ওই বছর বড় দলের হাতছানিতে ক্লাবও ছাড়েন, সুফিল থেকে যান আরামবাগেই। ক্লাব তাঁর মূল্য দেয়। পরের মৌসুমে মারুফুল হকের দলের অধিনায়ক হন তিনি। এই সময়েই অনূর্ধ্ব-১৬ সাফে জাফর-সুফিল আবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েন জাতীয় দলে। উইঙ্গার থেকে তাঁর স্ট্রাইকার বনে যাওয়া এই আসরেই। ভারতের বিপক্ষে সেই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে জাফরের সঙ্গে তাঁরও দারুণ অবদান।
স্ট্রাইকার সুফিল পারফরম্যান্সটা ধরে রাখেন পরের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়েও। সে আসরের চার ম্যাচে তাঁর তিন গোল। মূল জাতীয় দলে এরপর উপেক্ষা করা যায় না তাঁকে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে থাকা অ্যান্ড্রু ওর্ড তাঁর অভিষেকের সুযোগ করে দেন লাওসের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। ভুটান লজ্জার দুই বছর পর হওয়া জাতীয় দলের সেই ১-১ গোলে ড্র করা ম্যাচে একমাত্র গোলটি তাঁর। পরশু ভুটানের বিপক্ষে সিনিয়র জাতীয় দলে তাই মাত্রই দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল তাঁর। তাতেও গোল করে দুইয়ে দুই করে ফেললেন এই স্ট্রাইকার। হ্যাঁ, তাঁকে এখন স্ট্রাইকার বলাই যায়। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের তুমুল পারফরম্যান্সেও তাঁর অবদান অনেক। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্রয়ে একমাত্র গোলটি তাঁর। জাকার্তা থেকে ফিরে পরশু একই ছন্দে খেললেন ভুটানের বিপক্ষে। জেমির চোখে ম্যাচের সেরা পারফরমার ছিলেন তিনি, ‘সুফিল খুবই ভালো খেলেছে এই ম্যাচে। আমাদের সেরা পারফরমার বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। গোলটা ছিল অসাধারণ। সত্যি বলতে তাকে নিয়ে আমার আশা এখন আরো বেড়ে গেছে।’
জাতীয় দলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে আজ তিনে তিন করার হাতছানি এই স্ট্রাইকারের সামনে। কতটা মুখিয়ে আছেন তিনি। কাল টিম হোটেলে বিশ্রামের ফাঁকে জানালেন নিজের পারফরম্যান্সের চেয়ে দলের খেলাটা আসল, ‘আমরা দল হিসেবে যদি ভালো খেলতে পারি তাহলে গোল আসবেই। সেটা আমি করতে পারি বা অন্য যে কেউ।’ জেমির দলের মূলমন্ত্রও এটাই। যে কারণে সুফিল দলের নাম্বার নাইন নয়, তাঁর মতো একই দায়িত্ব আছে সাদ উদ্দিনেরও, এশিয়াডে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে যিনি বাংলাদেশের একমাত্র গোলটি করেছেন। স্কোয়াডে প্রকৃত নাম্বার নাইন হিসেবে সাখাওয়াত হোসেন রনি আছেন।
কিন্তু সুফিল দলের দর্শন ও পরিকল্পনায় অনেক বেশি একাত্ম বলেই মূল একাদশে তিনিই ফেভারিট। আজ অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ তাঁর। পরশু নেপালের দারুণ আক্রমণভাগও খাবি খেয়েছে পাকিস্তানি ডিফেন্সের কাছে। জেমির চোখে, ‘উচ্চতা ও শারীরিক সক্ষমতা নয় শুধু ওদের ডিফেন্স অর্গানাইজেশনও খুব ভালো।’ সুফিল বলছেন, ‘এমন ডিফেন্সের বিপক্ষে আমাদের আরো বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে হবে। ওদের উচ্চতা আমার কাছে সমস্যা মনে হয় না, গতি ও কৌশলে তা হারানো যাবে।’ নিজের কথা বলতে গিয়ে পুরো দলকেই হয়তো বার্তা দিলেন ভুটান ম্যাচের সেরা পারফরমার। বাংলাদেশ কোচও মনে করছেন ভুটানের চেয়ে কঠিন হবে পাকিস্তানকে হারানো। তবে খেলার ধরন বদলানোর কোনো সুযোগ দেখছেন না তিনি।
অর্থাৎ একই রকম গতিময় ফুটবল আশা তাঁর সাদ, সুফিল, বিপলুদের কাছ থেকে। আর সুযোগ কাজে লাগানোর ব্যাপারে আরো একটু বেশি মনোযোগ। ওয়ান অন ওয়ানে সুফিলকে গোল মিস করতে দেখা কোচকে মেনে নিতে হয় অসাধারণ আরেকটি সুযোগ হয়তো ঠিকই কাজে লাগাবেন তাঁর শিষ্য। এখন পর্যন্ত সেই আস্থার অন্যথা হয়নি। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষেও একই প্রত্যাশা কোচের, সবারও।