বরিশাল জেলার গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বরিশালের বহুল আলোচিত স্কুল ছাত্র হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি দুর্ধর্ষ ডাকাত কার্তিক ভক্তকে গ্রেপ্তার করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেনের দিকনির্দেশনায় থানার এসআই মোঃ সাহাব উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আগৈলঝাড়ার পশ্চিম মোল্লাপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেন। একপর্যায়ে ওই গ্রামে আত্মগোপনে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামি কার্তিক ভক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় কার্তিকের সহযোগি বিশ্বদেব হালদার, রনজিত ও সুভাষ বিশ্বাসের নেতৃত্বে ২০/২৫জনে অর্তকিত হামলা চালিয়ে এসআইসহ দুইজন পুলিশ কনস্টবলকে আহত করে হ্যান্ডকাফ পরিহিত অবস্থায় তাকে (কার্তিক) ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
খবর পেয়ে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার দুই থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে চারঘন্টা পর (রাত বারোটার দিকে) ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরত্বের রামের বাজার এলাকায় আত্মগোপন করা সাজাপ্রাপ্ত আসামি দুর্ধর্ষ ডাকাত কার্তিক ভক্তকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে। হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও দুর্ধর্ষ ডাকাত কার্তিক ভক্ত গৌরনদী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুন্দরদী মহল্লার মথুরা ভক্তর ছেলে।
আলোচিত হত্যা মামলা ॥ ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি বিকেলে গৌরনদীর সুন্দরদী মহল্লার ব্যবসায়ী কৃষ্ণ দাসের ছেলে ও উপজেলার টরকী বন্দর ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র রানা দাসকে কৌশলে স্থানীয় কার্তিক ভক্ত, সুলতান শরীফসহ তাদের সহযোগিরা পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে। তাৎক্ষনিক ওইসময় অপহরনকারীদের নাম প্রকাশ পাওয়ায় ১৪ জানুয়ারি রাতে অপহৃতার বাবা বাদি হয়ে কার্তিক ভক্ত, সুলতান শরীফ ও তার স্ত্রী হেনা বেগমকে আসামি করে গৌরনদী থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে সোর্পদ করেন। আদালতের বিচারক কার্তিক ও সুলতানের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের প্রথমদিনেই আসামিরা পাচারের উদ্দেশ্যে স্কুল ছাত্র রানা দাসকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
পরবর্তীতে অপহরনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় অপহৃত রানাকে হত্যা করে লাশ গুমের কথা স্বীকার করেন। এরপর অপহরনের পাঁচদিন পর আসামিদের স্বীকারোক্তিমতে টরকীরচর এলাকার একটি পানবরজের পাশের ডোবার কচুরিপানার নিচ থেকে রানার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওইসময় এলাকাবাসী ও নিহতের সহপাঠিরা স্কুল ছাত্র রানার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নীলখোলায় অবরোধ করে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করেন। পরে বিক্ষুব্ধরা আসামিদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছিলো।