30 C
Dhaka
এপ্রিল ২৭, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

মানুষের প্রতি কঠোর হবেন না যে কারণে

মানুষের নাজাতের পথ নির্দেশক হলো কুরআন এবং সুন্নাহ। যেখানে দেখানো হয়েছে মুক্তির সহজ পথ। শুনানো হয়েছে শান্তির অভয় বাণী। রয়েছে আল্লাহর রহমত বরকত ও মাগফিরাতের ভরপুর সুসংবাদ। আল্লাহ তাআলা নিজেই দয়ার সাগর, মাগফিরাতের দরিয়া ও করুণার ভাণ্ডার। তাইতো আল্লাহ বান্দাকে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করেন- ‘তোমরা আমার দয়া হতে নিরাশ হইওনা।’

বর্তমান সময়ে ঊনিশ থেকে বিশ হলে অর্থাৎ সামান্য কারণেও মানুষ অনেক বড় অন্যায় বা জুলুম করে ফেলে। অথচ হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআ`লা বলেন, ‘আমার রহমত আমার রাগকে অতিক্রম করেছে।’ (মুসলিম)

আল্লাহর রহমত এত বেশি যে রাগ তার রহমত তথা দয়ার কাছে হার মেনে যায়।এ কারণেই বান্দা যত অন্যায় আর পাপই করুক না কেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে দেরি আল্লাহ ওই বান্দাকে ক্ষমা করতে দেরি করেন না।

এ জন্য দুনিয়ায় আল্লাহ তাআলার এ গুণটি মানুষের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন। মানুষ যত বেশি দয়া প্রকাশ করবে আর ক্ষমার দৃষ্টিতে চলবে, তার জীবন হবে সফলকাম। যেমনটি ঘটেছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে। সে বিষয়টি আল্লাহ তাআলা কুরআনে তুলে ধরেছেন এভাবে-
‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি হয়েছিলে কোমল হৃদয়, যদি তুমি রূঢ় ও কঠিন অন্তরের হতে, তাহলে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে যেত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ কর। অতঃপর তুমি কোনো সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর ওপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৫৯)

সুতরাং দুনিয়ায় যেসব বান্দা আল্লাহ তাআলার এ ঘোষণার সঙ্গে একমত হবে। মানুষের প্রতি কোমল হৃদয়ের অধিকারী হবেন, কেউ অন্যায় করলে নিজ গুণে আল্লাহর জন্য ক্ষমা করে দেবেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ ওই অপরাধী বান্দাসহ ক্ষমাকারী বান্দার জন্য হয়ে ওঠবেন রহমতের দরিয়া। ক্ষমার সাগর ও করুণার ভাণ্ডার। আল্লাহ বলেন-
‘হে আমার বান্দারা! যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো। (তোমরা) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হ্ইও না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ (তোমাদের) সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সূরা যুমার : আয়াত ৫৩)

মুসলিম উম্মাহর জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় ঘটনা হচ্ছে জাহেলিয়াতের যুগ। যে যুগে মানুষ হত্যা, ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি এবং এ ধরনের বড় বড় গোনাহের কাজে জড়িত ছিলো। আর এ সব অপরাধের কখনো ক্ষমা হবে না বলে ছিলো নিরাশ ও হতাশ।

তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা ছিল এমন যে, যদি তোমরা এসব অপরাধ ত্যাগ করে আল্লাহ আনুগত্যের দিকে চলে এসো, কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালিত করো তবে তোমাদের সব বড় বড় গোনাহগুলোও মাফ হয়ে যাবে।

অবিশ্বাসী সমাজের গোনাহগারদের জন্য যদি এমন ঘোষণা আসতে পারে তবে আমরা তো মুসলমান। আল্লাহকে বিশ্বাস করি। হয়ত নফসের তাড়নায় ভূলবশতঃ দুনিয়ার মোহে পড়ে অন্যায় কাজে জড়িত হচ্ছি। আমরা যদি আল্লাহর দিকে চূড়ান্ত সংকল্প নিয়ে ফিরে যেতে চাই, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়ে রহমতের কোলে তুলে নেবেন। আর এমন আশা পোষণ করাই হচ্ছে ঈমানের একান্ত দাবি।

মনে রাখা জরুরি
এমনটি যেন না হয় যে, হায় হায়, এ লোক গোনাহ করেছে, সে একেবারেই শেষ, জাহান্নামে যাবে.. ইত্যাদি ইত্যাদি…। না এমনটি একেবারেই ঠিক নয়। কারণ অন্যায়ের তুলনায় আল্লাহর রহমতের বিশালতা অনেক বড়।
বরং যারা কোনো অন্যায় কাজ দেখলে ‘শেষ হয়ে গেছে, কিংবা জাহান্নাম অবধারিত; এসব বলে বেড়ায় তাদের সবচেয়ে বেশি বিপদ। কেননা ওই ব্যক্তিতো জানে না আল্লাহ কাকে ক্ষমা করবেন আর কাকে শাস্তি দেবেন।

যদি অপরাধী চোখের পানি ছেড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তাওবা করে তবে আল্লাহর রহমতের দরিয়া ঢেউ শুরু হয়ে যায়। তখন আল্লাহ ওই বান্দাকে মাপ করে দেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, বনি ইসরাঈলে দুই বন্ধু ছিল। তাদের একজন পাপ করত, অপরজন খুব ইবাদতগুজার ছিল। ইবাদতকারী সব সময় দেখতো যে, তার বন্ধু পাপ কাজে লিপ্ত। তাই সে বলত বিরত হও। একদিন সে তাকে কোনো পাপে লিপ্ত দেখে বলে, বিরত হও।
উত্তরে পাপকারী বন্ধু বলল, আমাকে ও আমার রবকে (আমাদের মতো) থাকতে দাও, তোমাকে কি আমার ওপর পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছে?
ফলে ইবাদতকারী বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না, অথবা তোমাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।
অতঃপর তাদের উভয়ের রূহ কবজ করা হল এবং তারা উভয়ে আল্লাহর দরবারে একত্র হল।
আল্লাহ ইবাদতকারীকে বলেন, তুমি কি আমার ব্যাপারে অবগত ছিলে? অথবা আমার হাতে যা রয়েছে তার উপর তুমি ক্ষমতাবান ছিলে?
আর পাপীকে তিনি বলেন, যাও, আমার রহমতে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর ব্যক্তির জন্য বলেন তাকে নিয়ে যাও জাহান্নামে?’ (আবু দাউদ)

সুতরাং কাউকে গোনাহ বা অন্যায় করতে দেখলে তাকে হাত ও মুখ দ্বারা বাঁধা দিয়ে নিষেধ করা যাবে। যদি সামর্থ্য না থাকে তবে অন্যায় অপরাধ বন্ধে নিরব বা বিশেষ ভূমিকা পালন করা যাবে। কিন্তু সীমা অতিক্রম করে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না, জাহান্নামে যাবে; এসব বলা কোনোভাবেই সমীচিন নয়। যার পরিনাম অত্যন্ত ভয়াবহ। কেননা আল্লাহ তাআলা যে কাউকে ক্ষমা করার অধিকার রাখেন। আল্লাহ বলেন-
‘আর আমাদের জন্য এ দুনিয়ার কল্যাণ লিখে দাও এবং আখিরাতেরও আমরা তোমার দিকে ফিরেছি। উত্তরে বলা হলো- শাস্তি তো আমি যাকে চাই তাকে দিয়ে থাকি, কিন্তু আমার অনুগ্রহ সব জিনিসেরে উপর পরিব্যপ্ত হয়ে আছে। কাজেই তা আমি এমন লোকদের নামে লিখবো যারা নাফরমানি থেকে দূরে থাকবে, জাকাত দেবে এবং আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনবে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৫৬)।

সুতরাং বান্দার উচিত আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে ভুল হয়ে গেলে তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে তার দিকে ফিরে আসা। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা। মানুষের প্রতি কোমলতা প্রকাশ করা। মানুষকে ক্ষমা করা। মানুষের ক্ষমার জন্য পরস্পর দোয়া করা।

আর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ছোট্ট হাদিসের শিক্ষায় নিজেদের জীবন গড়া জরুরি। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম মুসলিম সে ব্যক্তি, যার হাত ও জবান থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককে পরস্পরের জন্য রহমত কামনা, দয়া প্রদর্শন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের ও অন্যের ক্ষমার জন্য আবেদন করার তাওফিক দান করুন। রাগ, জিদ কিংবা হিংসা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official