এপ্রিল ২৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

আল্লাহর শেখানো যে আয়াতে শুকরিয়া আদায় করতেন বিশ্বনবি

আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত এক কথায় সবকিছুই মহান আল্লাহ তাআলার নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। কুরআনের ঘোষণায় ‘নিশ্চয় তিনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

তিনিই সে মহান সত্ত্বা যিনি- রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিণত করেন। মৃতকে জীবিত করেন আবার জীবিতকে মৃত্যুদান করেন। তিনিই বীজ থেকে ফসল বের করেন আবার ফসল থেকে বীজ বের করেন। তিনিই সে মহান সত্ত্বা যিনি খেজুরের দানা থেকে খেজুর গাছ উৎপন্ন করেন আবার দানাটি বের করেন খেজুর থেকে।

তিনিই সে মহান সত্ত্বা যিনি কাফেরের ঘরে মুমিনকে সৃষ্টি করেন আবার মুমিনের ঘরে কাফের সৃষ্টি করেন। তিনিই ডিম থেকে মুরগি আবার মুরগি থেকে ডিস সৃষ্টি করেন। এ সবই তার নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি যাকে ইচ্ছা বেশুমার রিজিক দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা রিজিক বা সম্পদ থেকে মাহরুম করেন। দুনিয়ার সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রণাধীন।

জগৎ বিখ্যাত তাফসির ‘ইবনে কাছির’-এ এসেছে-
হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার প্রতিপালকের সমীপে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য তাঁর প্রতি আত্মসমর্পন করুন। তার প্রতি পরিপূর্ণ ভক্তি-শ্রদ্ধাসহ তার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করে বলুন-
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاء وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاء وَتُعِزُّ مَن تَشَاء وَتُذِلُّ مَن تَشَاء بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَىَ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণ : ‘কুললিল্লাহুম্মা মালিকাল মুলকি তুতিল মুলকা মাংতাশাউ ওয়া তাংযিউল মুলকা মিম্মাংতাশাউ ওয়া তুইয্যু মাংতাশাউ ওয়া তুজিল্লু মাংতাশাউ বিইয়াদিকাল খাইরু ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িং ক্বাদির।’
অর্থ : ‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২৬)

কুরআনুল কারিমের সুরা আল-ইমরানের এ আয়াতেই আল্লাহ তাআলা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মতে মুহাম্মাদিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

কুরআনুল কারিম নাজিলের আগে ২ হাজার বছর ধরে প্রায় ৪ হাজার নবির আগমন ঘটে। বনি ইসরাইলের এসব নবি রাসুল ও তাদের উত্তরসূরীদের তিনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনের এ নেয়ামত শিক্ষা দেননি।

আল্লাহ তাআলা শুকরিয়া আদায়ের মহামূল্যবান সুসংবাদ ও নেয়ামত বনি ইসমাইল তথা উম্মতে মুহাম্মাদিকে দান করেছেন। আর বনি ইসমাইলের মধ্য থেকেই হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বকালের সর্ব যুগের সব নবি-রাসুলদের নেতা ও সাইয়েলদুল মুরসালিন হিসেবে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন।

হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য নবি ও রাসুল ছিলেন। তিনি মানুষ ও জ্বিন জাতির জন্যও নবি ও রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। আর তার আগমনের মাধ্যমেই নবুয়ত ও রেসালাত আগমনের পরিসমাপ্তি ঘটে। দুনিয়াতে আরো কোনো নবি ও রাসুলের আগমন ঘটবে না।

এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবিকে এমন অনেক নেয়ামত দান করেছেন, যা অন্য কোনো নবি ও রাসুল ও তাদের উত্তরসূরীদের দেননি। এসব নেয়ামতের মধ্যে আল্লাহ প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায়ের এ আয়াতটি অন্যতম।

এ নেয়ামতের অংশ হিসেবেই আল্লাহ তাআলা মদিনার অদূরে কষ্টসাধ্য পরিখা খননে মুসলিম বাহিনীর প্রতি সদয় হোন। ওহুদ পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তাআলা রোম সম্রাজ্য, পারস্য সম্রাজ্য ও ইয়েমেনের সানআ পর্যন্ত বিজয় দান করেছিলেন। তার ইচ্ছাতেই মুসলিমরা অপরিমিত রিজিকও লাভ করেছিলেন। যা তাদের অভাব-অনটনকেও দূরীভূত করেছিল।

উল্লেখ্য যে-
কুরআনুল কারিমের সুরা আল-ইমরানের ২৬নং আয়াতটি পঞ্চম হিজরিতে নাজিল হয়। এরপর মাত্র এক যুগের মধ্যেই তদানীন্তন পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ মুসলমানদের শাসনে চলে আসে। এ সীমানায় ইসলামের পতাকা উড়তে থাকে। আর এর মাধ্যমেই তার ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, হে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিপতি! যাকে ইচ্ছা তুমি ক্ষমতা দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা ছিনিয়ে নাও।’

মূলত ক্ষমতা প্রদান ও ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টি কুরআনের নীতি মালায় ঘোষণা করা হয়েছে। যারা মানুষের প্রতি জুলুম অত্যাচার করে, মানবতার অবমাননা করে, মানবতার উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সুবিচার ও পরোপকার প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় হয়ে অবিচার করে তাদেরকে যদিও নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়। অতঃপর নির্ধারিত সময়ের পর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পাকড়াও করেন।

যে পাকড়াও থেকে বাদ যায়নি ক্ষমতাশীল শাসক ফেরাউন, নমরূদ, শাদ্দাদ, কারুন। পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে তাদের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। মুসলমানদের সম্বোধন করে এ সব বিষয় ও কাজ থেকে সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের জন্য এ আয়াতে রয়েছে অনেক শিক্ষা ও ফজিলত। আল্লাহর শেখানো আয়াতের মাধ্যমে তার কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করতে পারলেই দুনিয়ার সব নেয়ামত মুমিন বান্দার জন্য সুনির্ধারিত। অন্যথায় সবাইকে আল্লাহর অবাধ্য বান্দাদের অবস্থায় পতিত হতে হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার প্রতিটি কাজে এ আয়াত দ্বারা শুকরিয়া আদায় করার পাশাপাশি আল্লাহর ক্ষমতায় পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের নেয়ামত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official