ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের ক্রমাগত নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার ফিলিস্তিনিরা। পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনপুষ্ট এই ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। তাদেরই একজন সামেহ মারাবা। তিনি ফিলিস্তিন জাতীয় দলের স্ট্রাইকার। মাতৃভূমির জন্য লড়তে গিয়ে ইসরায়েলের কারাগারে যেতে হয়েছে মারাবাকে।
সামেহ মারাবা এখন সিলেটে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপ খেলতে এসেছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে ফিলিস্তিন। তাদের প্রতিপক্ষ তাজিকিস্তান।
সামেহ মারাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিলের ঘটনা। কাতার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিলিস্তিনে ফিরছিলেন মারাবা। জর্ডান দিয়ে ফেরার পথে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে আটক হন তিনি। হামাসের জন্য অর্থ ও যোগাযোগ সংক্রান্ত সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয় মারাবার বিরুদ্ধে। ইসরায়েলের ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রথমে ৪৫ দিন কাটে সামেহ মারাবার। এরপর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। সেখানে দীর্ঘ ৮ মাস কারাবন্দি ছিলেন মারাবা।
কারাগারের স্মৃতি এখনও সামেহ মারাবাকে শিউরে তুলে। তিনি বলছিলেন, ‘বিভীষিকাময় সেইসব দিনের কথা মনে পড়লেও কষ্ট হয়। আমাকে বিনা কারণে আটকে রাখা হয়েছিল। অন্ধকার কুঠুরিতে হাঁটু গেড়ে বসে সারাদিন পার হতো। শারীরিক অত্যাচার করা না হলেও মানসিক অত্যাচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সূর্যের আলো দেখতে পেতাম না। নিজের প্রিয়জনদের সাথে দেখা হবে কিনা, জানতাম না।’
ইসরায়েলের অগ্রাসনে নিয়মিত ফুটবল খেলারই সুযোগ হয় না ফিলিস্তিনিদের। বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১০০ নম্বরে ফিলিস্তিনকে ‘নিরাপত্তাহীনতার’ অজুহাত দেখিয়ে গাজা কিংবা পশ্চিম তীরে ম্যাচ বাতিল করে দেয় ইসরায়েল। এমনকি সীমান্তে ফিলিস্তিন দলকে আটকে দেয়ার ঘটনাও অহরহ।
২০০৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে পারেনি ফিলিস্তিন। ইসরায়েল বাহিনী তাদেরকে সীমান্তে আটকে দিয়েছিল। এছাড়া ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলতে গিয়েও ইসরায়েল বাহিনীর বাধায় পড়তে হয় ফিলিস্তিন দলকে। তাদেরকে বহির্গমন ভিসা দেয়নি ইসরায়েল!
এসব নিয়ে পুরো ফিলিস্তিন ক্ষুব্ধ, সামেহ মারাবাও ক্ষুব্ধ। তিনি বলছিলেন, ‘এসব নিয়ে পুরো ফিলিস্তিন ক্ষুব্ধ, সামেহ মারাবাও ক্ষুব্ধ। তিনি বলছিলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের ওপর দখলদারিত্ব চালাচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতা হরণ করছে তারা।’
তবে বঙ্গবন্ধু কাপ খেলতে আসা সামেহ মারাবা সেসব নিয়ে এখন ভাবছেন না। তার ভাবনাজুড়ে এখন এই টুর্নামেন্টে ভালো করা। ফিলিস্তিনের জার্সি গায়ে ১৫ ম্যাচে ৮ গোল করেছেন সামেহ মারাবা।