রুপন কর অজিতঃ ‘মাগো তুই আসবি বলে/ যতই আলো জ্বেলেছিলাম/ নবমীর রাত পোহাতেই/ সব নিভিয়ে ফেলেছিলাম। / বিদায় দেবার আগে মা তোর / গাল দু’খানি ছুঁই / আসছে বছর এই শরতে / আবার আসিস তুই।’ দেবী দুর্গার বিদায় বেলায় ভক্ত মনের আকুল আকুতি ফুটে উঠেছে এই পঙ্ক্তিতে।
শুভ বিজয়া দশমী আজ। চারদিকে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
চণ্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এরপর হাসি-আনন্দ আর পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে কেটে গেছে চার দিন। সপ্তমীতে চক্ষুদানের মাধ্যমে প্রতিমায় যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, আজ শুক্রবার সকালে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা। পেছনে ফেলে যাবেন ভক্তদের চারদিনের আনন্দ-উল্লাস আর বিজয়ার দিনের অশ্রু। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব।
গতকাল মঙ্গলবার প্রতিটি মণ্ডপ ও মন্দিরে দেবীর বন্দনায় ছিল কেবলই বিষাদের ছায়া। ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্যে, ধূপ আরতি ও দেবীর পূজা-অর্চনায় কেবলই ছিল মায়ের বিদায়ের সুর। দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল সমগ্র বিশ্বের কল্যাণ কামনা।
এবার মা আসছেন গজে আর চলে যাবেন নৌকায়।
পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জন করা হবে।বিকাল ৪টা থেকে শুরু হবে প্রতিমা বিসর্জন। এর আগে বিবাহিত নারীদের সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে হবে দেবী বরণ।
দুর্গাপূজায় সর্বশেষ রীতিটি হচ্ছে ‘দেবী বরণ’। রীতি অনুযায়ী, সধবা নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ান। দেবীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর সেই সিঁদুর প্রথমে সিঁথিতে মাখান পরে একে-অন্যের সিঁথি ও মুখে মাখেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই এই সিঁদুর খেলা। ভক্তদের বিশ্বাস, দুর্গা আগামী বছর আবারো সঙ্গে করে শাঁখা সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন। সেই শাঁখা সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে।
বরিশাল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মানিক মুখার্জী জানান, এবার বরিশাল জেলা ও মহানগরে মোট ৬৪৫ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। করোনার কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে উৎসব হলেও এবারের প্রস্তুতি ছিলো বেশ জাঁকজমকপূর্ণ, দর্শনার্থীও ছিলো অনেক বেশি ।গত দুদিন বৃষ্টি কারনে অনেক লোক বের হতে পারেনি।তবে শান্তিপূর্ন ভাবে বরিশালে এবার পূজা উদযাপন হয়েছে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নি।
।অধিকাংশ মন্ডপে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা ও বিজয় দশমী উপলক্ষ্যে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ।
ঝাউতলা সার্বজনী পূজা মন্দির কমিটির সাধারন সম্পদক সুজয় সেন বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে দুর্গাপূজার আনন্দ ভালোভাবে উপভোগ করা যায়নি। এবার প্রকোপ কম থাকায় সুন্দর পরিবেশে পূজা উদযাপন হয়েছে,তবে বৃষ্টির কারনে একটু সমস্যা হয়েছিলো সব মিলিয়ে গত দুই বছরের তুলনায় অনেক ভালো ও লোক সমাগম ও অনেক ছিলো।বিজয় দশমীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্দির কমিটির ও স্বেচ্চাসেবক এবং প্রশাসনের সমন্বয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে দেবী বিসর্জন হবে বলে তিনি মনে করেন।
বরিশালে বিজয়া দশমী উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা।