এপ্রিল ২৪, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ঢাকা শিক্ষাঙ্গন

ভাইরাল ছবিটির আসল ব্যাখ্যা

গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, রিকশার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছেলে রিকশায় বসা সমাবর্তনের গাউন পরিহিত এক বৃদ্ধকে স্যালুট দিচ্ছেন।

যেখানে পিতাকে রিকশার আসনে বসিয়ে পুত্র নিজের গাউন পরিয়ে দিয়েছেন ধরে অনেকে স্ট্যাটাস দিতে শুরু করে, ‘এটি কনভোকেশনের সেরা ও শ্রেষ্ঠ ছবি। নিশ্চিত সে পৃথিবীর সব থেকে সুখী পিতা, নিজে রিকশা চালিয়ে সন্তানকে পড়িয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। স্যালুট গর্বিত পিতা ও তাঁর সন্তান কে।’

কিন্তু আদতে কী ‘ভাইরাল’ হওয়া ছবির ব্যাখ্যা ঠিক ছিল? প্রশংসা করার পাশাপাশি এটা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এরপর ব্যাখ্যা দিলেন ভাইরাল হওয়া ছবির গ্র্যাজুয়েট লিটন মোস্তাফিজ। যিনি ছবিটি তুলেছিলেন সেই শাহরিয়ার সোহাগও মুখ খুলেছেন। ফেসবুকে দেওয়া ছবিটি নিয়ে তাদের সেই ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।

লিটন মোস্তাফিজের স্ট্যাটাস:
স্যালুট…

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে এ ছবির একটি বিশেষ অংশ গতকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছবির ওই অংশটি সম্ভবত বিভিন্ন গ্রুপ হয়ে ব্যক্তি থেকে আরম্ভ করে জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

ফটোগ্রাফার শাহরিয়ার সোহাগ গতকাল অপরাজেয় বাংলার সামনে থেকে এ ছবিটি তোলেন। রিকশায় যিনি বসে আছেন তিনি আমাদের গর্বিত একটি অংশ। মনেই হয়নি সে মুহূর্তে তিনি অন্য একটি অংশ। পৃথিবীর আর সব বাবার মতো এ বাবার চোখেও আমি স্বপ্ন খুঁজে পাই। মোটেও মনে হয়নি তার গায়ের ঘাম লাগলে দুর্গন্ধ হয়ে উঠবে আমার গাউন। এমন ঘামের চর্ম শরীরে বেড়ে ওঠা আমার। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর চাকা এ ‘পিতা’দের ঘামে ও দমে ঘোরে।

আমরা যখন খুব আনন্দ করছিলাম তখন তিনি আনমনা নজরে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বিষয়টি আমি বুঝে ‘পিতা’কে ডাক দেয়। তিনি সাড়া দেন। আমি আমার গাউন, হুড খুলে ‘পিতা’কে পরিয়ে দেই। তারপর ছবি তোলা হয়। একজন গর্বিত গ্রাজুয়েট মনে হচ্ছিলো তখন আমার। এঁদের রক্ত ঘামানো অর্থেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পেরেছি। এ ‘পিতা’র পোশাক দেখে স্যালুট না করে পারিনি। এ ছবি তুলে রাতেই ফেইসবুকে পোস্ট করেন ফটোগ্রাফার। ছবিটি ভাইরাল হলে দেখা যায় অনেকেই আমাকে ভুল বুঝছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছবিটি নিউজ হয়ে গেছে। দুঃখিত আমি যে, মুখ ঘোলা করার জন্য। তবুও বলি, এসব মানুষের মাথা খালি বলেই আমাদের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হুড! যাঁরা ভুল বুঝেছেন আমি তাঁদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ফটোগ্রাফারের হয়ে। এসব মানুষেরা আমাদের সত্যিকার বাবা-ই। কারণ আমি নিজেও কৃষকের লাঙলের ফালা বেয়ে উঠে এসেছি।

শাহরিয়ার সোহাগের স্ট্যাটাস: 
প্রোফেশনালি কিংবা শখের বসে ছবি তোলা আমার নেশা। লেখালেখি করি বিধায় কৌতূহলটাও বেশি। ক্যামেরা নিয়ে সেদিন ঘুরতে থাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার মামা লিটন মোস্তাফিজ ও তার বন্ধুরা সমাবর্তন উদযাপন করছিলো। তাদেরও কিছু ছবি তুললাম।

অপরাজেয় বাংলার সামনে আসতেই একজন বৃদ্ধ রিকশায় বসে অনেকক্ষণ টুপি উড়ানো দেখছিলেন। কৌতূহল নিয়ে কাছে গেলাম আমি আর মামা। “তাঁর ছেলেও নাকি পাশ করেছে।” আমি বিস্তারিত অনুসন্ধান কিংবা জেরা করার প্রয়োজন মনে করিনি। কারণ এমন ঘটনা এখন অহরহ। গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলেমেয়েরাই এই গ্রাজুয়েটের একটা বড় অংশ। উনার সন্তান সমাবর্তন টুপি পরেছেন বা পরবেন সে যাই হোক, উনি একজন বাবা। তারও সন্তান আছে। আর আজ যারা গ্রাজুয়েট তারাও কোনো না কোনো বাবার সন্তান। অনেককে শুনেছি তাকে বাবা বলে সম্বোধন করতে। আর এত মানুষের বাবা ডাকে উনি তখন আবেগপ্লুত।

আমি আমার তোলা কয়েকটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করি। অনেকে অনেক ভাবেই ছবিগুলোতে অতিরঞ্জিত ক্যাপসন ব্যবহার করেছেন। অনেকে আবার ছবি নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। নিজের ভালো লাগার জায়গা থেকে ছবিগুলো পোস্ট করার পর ছবিগুলো রীতিমত ভাইরাল।

আলোচনা কিংবা সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে গ্রাজুয়েট ভাবুন আর বৃদ্ধর ক্লান্ত মুখে নিজের বাবাকে কল্পনা করুন। বাবারা তো একই রকম হয়। আলাদা শুধু চেহারাটা। সব বাবাদের ভেতরটা একই রকম। এখন থেকে রিকশায় উঠলে কিংবা যে কোনো কাজে বয়োজ্যেষ্ঠদের যেন সম্মান করি। কারণ আমাদের বাবারা আমাদের কারো কাছ থেকেই যেন কষ্ট না পান। সব বাবারা ভালো থাকুক। এপারে কিংবা ওপারে।

সম্পর্কিত পোস্ট

হিজবুত তাহরীরের মিছিল, পুলিশের টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

banglarmukh official

সাংবাদিকরা ভুয়া নিউজ করে আমাদের ১২টা বাজিয়ে দিচ্ছে

banglarmukh official

ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা এখন এক নর্দমা

banglarmukh official

ফিল্মি স্টাইলে আদালত চত্বর থেকে আসামি ছিনতাই চেষ্টা

banglarmukh official

সাভারে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, নিহত ৩

banglarmukh official

গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নারীসহ দগ্ধ ৪

banglarmukh official