এপ্রিল ২৫, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম

রাতে ঘুমাতে গেলে বিশ্বনবি যেসব আমল করতেন

ইসলাম ডেস্ক:

আল্লাহ তাআলা রাতকে মানুষের বিশ্রামের জন্য নির্ধারিত করেছেন। দিনকে জীবিকা অর্জনের জন্য আর রাতের অন্ধকারকে মানুষের ঘুমের জন্য আচ্ছাদন হিসেবে তৈরি করেছেন বলে কুরআনুল কারিমের সুরা নাবায় ঘোষণা করেছেন।

মানুষের এ ঘুম মৃত্যুর ন্যায়। ঘুমালে মানুষের জাগতিক চিন্তা চেতনা বা কোনো উপলব্ধি থাকে না। তাই ঘুমের সময় যাতে মানুষের কোনো বিশাল ক্ষতি বা পেরেশানি না হয় সেজন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিশ্বনবি বেশকিছু আমল করতেন। যাতে ঘুম নিরাপদ ও প্রশান্তিদায়ক হয়।

ঘুম সম্পর্কে হাদিসে একাধিক আমল করার কথা এসেছে। হাদিসের সেসব আমল তুলে ধরা হলো-
> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাতে বিছানায় (ঘুমাতে) যেতেন, তখন তার দু’হাত একত্রিত করে হাতের তালুতে ফুঁ দিতেন এবং সুরা ইখলাছ, সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস পড়তেন। অতঃপর (এ তিন সুরা পড়ে হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে) দু’হাত দ্বারা যত দূর সম্ভব শরীর মুছে ফেলতেন। মাথা, মুখ ও শরীরের সম্মুখভাগ মুছতেন। এরূপ তিনবার করতেন।’ (বুখারি,মুসলিম, মিশকাত)

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যদি কেউ ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তাহলে শয়তান তার কাছে আসতে পারে না।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

> হজরত আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে। তার জন্য আয়াত দুটি যথেষ্ট হবে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ‘আলিফ লাম তানযিল’ (সাজদাহ) এবং সুরা ‘তাবারাকাল্লাজি’ (মুলক) পড়ে ঘুম যেতেন।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মিশকাত)

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ বিছানায় ঘুমাতে যায়, তখন যেন সে বলে-
بِاسْمِكَ رَبِّىْ وَضَعْتُ جَنْبِىْ وَبِكَ أَرْفَعُهُ اِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِىْ فَارْحَمْهَا وَاِنْ اَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِيْن –
উচ্চারণ : ‘বিসমিকা রাব্বি ওয়াদাতু জাম্বি ওয়া বিকা আরফাউহু ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সালিহিন।’

অর্থ : হে আমার প্রভু! তোমার নামে আমার পার্শ্ব রাখলাম এবং তোমার নামেই উঠব। যদি তুমি আমার আত্মাকে রেখে (মৃত্যু) দাও তবে তার প্রতি দয়া কর। আর যদি ফেরত (জাগিয়ে) দাও, তাহলে তার প্রতি লক্ষ্য রাখ। যেমনভাবে তুমি লক্ষ্য রাখ তোমার নেক বান্দাদের দিকে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

> হজরত হুজায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন রাতে শয্যাগ্রহণ করতেন তখন তিনি তাঁর হাত গালের নিচে রাখতেন। অতঃপর বলতেন-
اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَاَحْىَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুত ওয়া আহইয়া।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মৃত্যুবরণ করি এবং তোমার নামেই জীবিত হই।’ (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)

বিশেষ করে ঘুম না আসলে বিশ্বনবি এ দোয়া পড়তে বলেছেন-
হজরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ আল-মাখজুমি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ দায়ের করে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের কারণে আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাওয় তখন বলো-
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظَلَّتْ وَرَبَّ الأَرَضِينَ وَمَا أَقَلَّتْ وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضَلَّتْ كُنْ لِي جَارًا مِنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا أَنْ يَفْرُطَ عَلَىَّ أَحَدٌ مِنْهُمْ أَوْ أَنْ يَبْغِيَ عَلَىَّ عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতিস সাবয়ি ওয়া মা আজাল্লাত ওয়া রাব্বাল আরদিনা ওয়া মা আকাল্লাত ওয়া রাব্বাশ শায়াত্বিনি ওয়া মা আদাল্লাত কুন লি ঝারাম মিন শাররি খালক্বিকা কুল্লিহিম ঝামিআ। আইঁইয়াফরুত্বা আলাইয়্যা আহাদুম মিনহুম আও আইঁইয়াবগিয়া আলাইয়্যা আয্যা ও ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ও লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’ (মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : “হে আল্লাহ! সাত আকাশের প্রভু এবং যার ওপর তা ছায়া বিস্তার করেছে, সাত জমিনের প্রভু এবং যা কিছু তা উত্থাপন করেছেন, আর শয়তানদের প্রতিপালক এবং এরা যাদেরকে বিপথগামী করেছে!

তুমি আমাকে তোমার সব সৃষ্টিকুলের অনিষ্টতা থেকে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যাও, যাতে সেগুলোর কোনোটি আমার ওপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে অথবা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে। সম্মানিত তোমার প্রতিবেশী, সুমহান তোমার প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তুমি ব্যতিত আর কোনো মাবুদ নেই।’

মুমিন মুসলমানের উচিত, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত আমল ও দোয়াগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা। রাতের যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে হেফাজত থাকা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলগুলো নিজেদের নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

রোজা রেখে আতর-পারফিউম ব্যবহার করা যাবে?

banglarmukh official

গর্ভবতী নারীর রোজার মাসয়ালা

banglarmukh official

তারাবির নামাজ ছুটে গেলে করণীয়

banglarmukh official

রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে?

banglarmukh official

চাঁদ দেখা গেছে, সৌদি আরবে রোজা শুরু শনিবার

banglarmukh official

শাবান মাসে কত তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা যাবে

banglarmukh official