স্টাফ রিপোর্টার:
বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের চোর উপাধি দিলেন অধ্যক্ষ মেজর সাইদুর রহমান। চোর উপাধি দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি। স্কুল-কোচিংও বন্ধ করে দিয়েছেন প্রায় ৩০ শিক্ষার্থীর। পাশাপাশি বার্ষিক পরীক্ষার পরে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার হুমকিও দেন তিনি। এ ঘটনায় অভিভাবকরা অধ্যক্ষের কাছে মাফ চেয়েও রক্ষা করতে পারেননি তাদের সন্তানদের।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ২৮ ও ২৯ সেপ্টেম্বর নগরীর সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বই মেলায় একটি স্টল বসানো হয়। ওই স্টল থেকে শিক্ষার্থীরা বই ক্রয় করে। দু’দিনব্যাপী বই মেলা শেষ হওয়ার পরে স্টল মালিক দোকান থেকে বই খোয়া যাওয়ার বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানান। এরপরই অধ্যক্ষ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির সন্দেহভাজন শিক্ষার্থীদের তার কক্ষে ডেকে নেন। ডেকে নিয়ে বই চুরি হওয়ার বিষয়টি জানতে চান শিক্ষার্থীদের কাছে।
এসময় শিক্ষার্থীরা বই চুরির বিষয়টি অস্বীকার করে। পরে শিক্ষার্থীদের ব্যাগে থাকা বইয়ের রশিদ চাওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা রশিদ না দেখাতে পারায় পরের দিন অর্থাৎ ১ অক্টোবর অভিযুক্ত অন্তত ৩০ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কলেজে ডাকেন অধ্যক্ষ। অভিভাবকদের ডেকে সকল শিক্ষকদের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষ মেজর সাইদুর রহমান সরাসরি ওই শিক্ষার্থীদের চোর বলে আখ্যা দেন। চোর আখ্যা দিয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে এবং কোচিংএ না আসার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়ে দেন। এছাড়াও বার্ষিক পরীক্ষার পরে তাদের ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন অধ্যক্ষ। এসময় অভিভাবকরা অধ্যক্ষের কাছে হাত-পা ধরে মাফ চাইলেও সন্তানদের রক্ষা করতে পারেননি অধ্যক্ষের এমন সিদ্ধান্ত থেকে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, আমাদের কোমলমতি সন্তানদের অহেতুক স্কুল ও কোচিংএ যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আমাদের সন্তানরা কোনো অপরাধ করেনি। কারা বই চুরি করেছে তার দায়ভার আমাদের সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা বলেন, আমাদের সন্তানরা বই ক্রয় করেছে কিন্তু দোকনদার রশিদ দেননি। দোকান থেকে রশিদ না নেয়ার ফলেই আমাদের সন্তানদের চোর উপাধি দেয়া হয়েছে। আগে থেকে রশিদের বিষয়টি জোরালোভাবে বলে দিলে সবাই রশিদ নিয়ে আসতো। পর্যবেক্ষক মহল বলছে, শিশু শিক্ষার্থীদের চোর আখ্যা দেয়ার কোনো বিধান নেই। শিশু শিক্ষার্থীরা চুরি করতে পারে না। তারা ভুল করতে পারে। এ বয়সেই যদি শিশু শিক্ষার্থীদের চোর আখ্যা দেয়া হয় তাহলে মনের দিক থেকে তারা বড় হবে কিভাবে।
আবার বইয়ের জন্য তো শিশুদের চোর বলার কোনো সুযোগই নেই। আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন শিশুদের চোর বলার অধিকার দেয়নি। শিশুদের চোর বলা যাবে না। শিশুরা কখনও চোর হতে পারেনা। তারা ভুল করতে পারে। তাই বলে তারা চোর হবে না। শিশুদের চোর বলাটাও একটা অপরাধ। এসকল বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ মেজর সাইদুর রহমানের মুঠো ফোনে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।