নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, নিচে বিলের কালচে পানির ওপর সবুজের ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে লাল শাপলা। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতিকে ভিন্ন এক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে যেন রং-তুলির আঁচরে।
তাই যেন সৌন্দর্যমণ্ডিত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ও উজিরপুর উপজেলার সাতলার এ লাল শাপলার বিলে পর্যটকদের ভিড় প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এমন সময়টাতে সপ্তাহের সাত দিনেই ভোর থেকে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে বিস্তীর্ণ লাল শাপলার বিল এলাকা। যে বিলের পানিতে ঘুরে বেড়িয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। তবে এখানে যে শুধু লাল শাপলা বা প্রকৃতির সবুজ রংয়ের সমারোহই ঘটেছে এমনটাও নয়, এখানে লাল শাপলার মাঝেই দেখা মিলছে সাদা শাপলা, সাদা বক, দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
আরিফুর রহমান নামের এক পর্যটকের মতে, এ শাপলার বিলে ঘুরে যে কেউ চিরচেনা বাংলার এক অপরূপের দেখা পাবে। তবে এ রূপ দেখতে হলে অবশ্যই ভোরের সূর্য ওঠার আগে সেখানে থাকতে হবে। কারণ ভোরে প্রকৃতি যেভাবে তার রূপ মেলে ধরে সেটি আর গোটা দিনেও উপভোগ করা যাবে না।
সনিয়া নামের এক তরুণী বলেন, এটা একটি অন্যরকম জায়গা। বিলের পাশ ধরে এগিয়ে চলা সড়কে দাঁড়িয়ে যতদূর চোঁখ যাবে, সবুজের মাঝে রক্তিম আভা হাতছানি দেবে। আর বিলের পানিতে নৌকা নিয়ে এগিয়ে চললে দেখা মিলবে লাল আর সাদা শাপলার সঙ্গে বক, ডাহুক, পানকৌড়ি, দোয়েল, শালিক, মাছরাঙাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, শোনা যাবে তাদের কলকাকলি। এছাড়া দেখা মিলবে মৌমাছিসহ বিভিন্ন ধরনের পোঁকামাকরও। এ যেন এক স্বর্গপুরী, যার চারিদিক শিল্পীর নিপুন হাতে আকা চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বর্ষার ছয় মাস নিচু জমিতে কখনও হাটু আবার কখনও কোমর পানি থাকে। আর এতেই প্রকৃতির এই দান লাল শাপলা ফোঁটে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে শুরু করে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিলে শাপলা বেশি থাকে। দুর্গাপূজার আগ পর্যন্ত অনেকে এ শাপলা তরকারি হিসেবে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করে। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত প্রায় দুই মাস শাপলা বিলে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হয়।
তবে সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে মেলে ধরে লাল শাপলাগুলো আবার সূর্য মাথার ওপর উঠতেই ধীরে ধীরে নিজেকে আবার গুটিয়ে নেয়। আর তাইতো শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে সূর্য প্রখর হওয়ার আগে। প্রকৃতির নিয়মকানুন যারা জানেন বা বোঝার চেষ্টা করেন, তারাই শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে ভোরেই হাজির হয়ে যান বিলে। ছোট ছোট নৌকায় করে বিলজুড়ে ঘুরে বেড়ানোই এখানে আনন্দ যোগায়।