রাজধানী ঢাকা নগরীর জমি ও ফ্ল্যাটের মূল্য গগনচুম্বী, যা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এ অবস্থায় এসব মানুষের জন্য ২০ হাজার ১৬০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন। অনুমোদন পেলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ঢাকার ‘উত্তরা ১৮নং সেক্টরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনসাধারণের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
জানা গেছে, উত্তরা আদর্শ মডেল টাউনের (তৃতীয় ফেজ) ১৮নং সেক্টরে এজন্য ২১৪ দশমিক ৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ করবে সরকার। প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ভবনে একতলা বেজমেন্টসহ ১৬ তলাবিশিষ্ট ২৪০টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ২০ হাজার ১৬০টি ফ্ল্যাট থাকবে। পুনর্গঠিত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯০২ কোটি ২১ লাখ টাকা। রাজউকের নিজস্ব অর্থায়নে প্রবল্পটি ২০২০ সাল নাগাদ বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ফ্ল্যাট প্রদান, সম্প্রসারিত এলাকায় আবাসন সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ঢাকা শহরের জনসংখ্যার আবাসিক চাপ হ্রাস করার জন্য প্রকল্পটি নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, বিদ্যমান প্রকট আবাসন সমস্যা নিরসন, মিরপুর ও টঙ্গীর মাঝখানে পর্যায়ক্রমে নগরায়ণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করা, নতুন নগরকেন্দ্র সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণ এবং ভবিষ্যতের আবাসন চাহিদা পূরণ করার জন্যই এ প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধীকার প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম বলে গৃহায়ণ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন বর্তমানে ব্যস্ততম এবং জনবহুল শহর। চাকরি, ব্যবসা এবং বহুবিধ কারণে লাখ লাখ লোক ঢাকা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। এ বিপুলসংখ্যক লোকের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বসবাসযোগ্য জায়গা অপ্রতুল। ফলে দিনের পর দিন ঢাকা মহানগরী ঘণবসতিপূর্ণ, অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা হয়ে পড়ছে, হারাচ্ছে সৌন্দর্য। এর সবকিছুই হচ্ছে পরিকল্পিত নগরায়ণের অভাবে। নগরীর চতুর্দিকে পরিকল্পিত স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে ক্রমবর্ধমান আবাসন সংকটের চাপ কমানো যেতে পারে।
জানা গেছে, ২০ একরের চেয়ে বেশি জমি ব্যবহারের সংশ্লিষ্টতা আছে বিধায় প্রকল্পটি রাজউকের নিজস্ব অর্থায়নে প্রস্তাব করা হলেও পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১১ এর নভেম্বর হতে ২০১৬ সালে জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১১ সালের অক্টোবরে একনেকে অনুমোদিত হয়। অতঃপর রেট সিডিউল পরিবর্তন, প্রকল্পের অর্থে এসটিপি, স্কুল ও মানেজমেন্ট বিল্ডিং নির্মাণ, বিআইসিইকে ফ্ল্যাটের আকার পরিবর্তন, এলপি গ্যাসের সিলিন্পার ব্যাংক স্থাপন স্থাপন, কতিপয় নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মানে হলো সংশোধিত পুনর্গঠিত প্রকল্পে মোট ব্যয় এক হাজার ৮৭১ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অনুমোদিত প্রকল্পের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ বেশি। জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ২১৪ দশমিক ৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ, বিভিন্ন টাইপের ফ্ল্যাট নির্মাণ রয়েছে। এর মধ্যে ১৩১টি ভবনেেএক হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১১ হাজার চারটি এবং ৪৮টি ভবনে এক হাজার ৫০ বর্গফুট আয়তনের চার হাজার ৩২টি ফ্ল্যাট, পরামর্শক নিয়োগ, বিভিন্ন পদমর্যাদার ১৪০ জন জনবল নিয়োগ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ফুটপাত, সীমানা প্রাচীর, সেতু, কালভার্ট, সড়ক, স্কুল, কলেজ, কমিউনিটি সেন্টার, পানির ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, সোলার সিস্টেম, বিদ্যুতায়ন, পার্কিং স্থান নির্মাণ, ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য প্রচারাণা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শিশু পার্ক, পয়োনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজ আছে।