পটুয়াখালী প্রতিনিধি ::
তখন বয়স ১১ বছর। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। খালা একটি যৌনপল্লীতে বেচে দেন। প্রতি মাসে এসে বাবা টাকা নিয়ে যেতেন। গত মঙ্গলবার পালিয়ে উদ্ধার হওয়ার পর পুলিশ বাবার হাতেই তাকে তুলে দিয়েছে। কোনো মামলা হয়নি।
১৭ বছরের মেয়েটি জানায়, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় খালা কলাপাড়ার বাড়ি থেকে পটুয়াখালী শহরে নিয়ে আসেন। এখানে খালার ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল; কিন্তু মেয়েটিকে বেচে সদর রোডের পতিতাপল্লীর পাশে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এরপর দালাল এসে ওকে খালার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। দালাল পৌঁছে দেয় পল্লীর সর্দার লিপি বেগমের কাছে। শিশু অবস্থায়ই তাকে যৌন কর্মে বাধ্য করেন তিনি। এক বছর পর মেয়েটি পালিয়ে বাড়ি চলে যায়। তারপর মা-বাবা ওকে বিয়ে দেন। এক বছর স্বামীর সংসার করে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করলে বাবার বাড়ি ফিরে যেতে চায়; কিন্তু ওখানে ঠাঁই পায়নি। একপর্যায়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হতাশ হয়ে আবার পল্লীতে ফিরে আসে।
এদিকে মেয়ে পল্লীতে চলে গেছে—এ খবর পেয়ে ওর বাবা প্রতি মাসে এসে ওর কাছ থেকে আট থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে যেতেন। এদিকে এই কাজে চরম অনীহা চলে আসে মেয়েটির। গত মঙ্গলবার রাতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেখতে যাবে বলে পল্লী থেকে বের হয়। সর্দারনি ওর সঙ্গে একজন রক্ষী দিয়ে দেন। সুযোগ বুঝে সে রাত ৯টায় লঞ্চঘাটের উদ্দেশে একটি রিকশা নিয়ে চলে যায়।
এদিকে ওকে না পেয়ে রক্ষী তাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায় গিয়ে তাকে ধরে ফেলে। আর পল্লীতে ফিরবে না বলে রক্ষীকে জানায়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। লোকজন এসে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ওর খালা, বাবা কিংবা ওই সর্দারনির বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি, বরং পরিবারকে খবর দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাবা ও চাচার হাতে তুলে দেয়।
পটুয়াখালী সদর থানার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। ওকে পল্লীতে বিক্রির জন্য যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে পরিবার ব্যবস্থা নেবে কি না, সে ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে আইনের সহায়তা চাইলে আমরা দেব।’