নিউজ ডেস্ক:
বরিশাল নগরের কাশিপুরে অনেক বাসা-বাড়ীতে বিভিন্ন ধরনের প্লাষ্টিক পণ্য তৈরির কাজ করছে বিভিন্ন রিসাইকেল ফ্যাক্টরি। কারখানাগুলোতে প্রথমে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা প্লাষ্টিক বর্জ্য হাতে ভেঙে দানা তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে প্লাষ্টিক দানাগুলো মেশিনে ভেঙে পণ্য তৈরির উপযোগী করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় কারখানা থেকে তৈরি হচ্ছে উৎকট বিষাক্ত গন্ধযুক্ত কালো ধোঁয়া। শ্রমিকের পরনে নেই কোনো নিরাপত্তা পোশাক। কারখানায় নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। এ অবস্থা কেবল নগরের কাশিপুরেই নয়। বরিশাল শহরের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ প্লাষ্টিক কারখানা।
এমনকি এসব কারখানাগুলোতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সও নেই। কাশিপুর থেকে রাকুদিয়া বাজার পর্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন বাসা ও খালি স্থানে প্লাষ্টিক দানা তৈরির একাধিক কারখানা রয়েছে। পুরো এলাকা প্লাষ্টিকের উৎকট গন্ধে ছেয়ে গেছে। কারখানাগুলোর ভেতরে নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা। কিছু কারখানায় সাধারণ ফ্যান ব্যবহার করা হলেও কোনো কোনোটিতে আবার তাও নেই। শিশু, নারী ও প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকরা এসব কারখানায় কাজ করছেন।
কারখানাগুলোয় ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলে। দেখা যায়, শ্রমিকরা দীর্ঘসময় কোনো ধরনের মাস্ক ছাড়াই কাজ করছেন। এর ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। প্লাষ্টিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরা, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলতেও রাজি হন না তারা।
তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, কাশিপুর থেকে রাকুদিয়া বাজার পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকাই প্লাষ্টিকের কারখানায় পরিণত হয়েছে। বিষাক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ২৪ ঘণ্টাই এ অবস্থার শিকার এই এলাকার মানুষ। রাতের বেলায় কারখানাগুলো থেকে যেন আগুন বের হয়। শীতকালে অবস্থা আরো খারাপ।
রাজনৈতিক নেতা ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে হাত করে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কাশিপুরের বাঘিয়া(ঝাউতলা) ‘এ.আর.টি.পেট.ট্রেডিং রিসাইকেল’ নামে অনিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান প্লাষ্টিক দানাগুলো মেশিনে ভেঙে পণ্য তৈরির উপযোগী করে।
দুর্ভোগের কথা জানাতে গিয়ে আশপাশের বাসিন্দারা জানায়, কারখানা চালু রাখলে সবসময় দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয়। একটু খোলা রাখলে মুহুর্তের মধ্যেই ঘর দুর্গন্ধে ভরে যায়। সাথে গরম হাওয়াও ঘরে প্রবেশ করে। আর প্রচন্ড শব্দ তো রয়েছেই। এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে পার্শ্ববর্তী খোকনের ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধেও।
সরেজমিনে ‘এ.আর.টি.পেট.ট্রেডিং রিসাইকেল’ নামে প্লাষ্টিক দানা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক কবির হোসেরে সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।পরে ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কারখানা মালিক ও নগরের পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই কারখানা চলছে। তিনি মুঠোফোনে আরও বলেন, সংবাদকর্মীদের কারখানার কাগজ-পত্র দেখার কোন যৌক্তিকতা নেই।
উল্লেখ্য, গত মাসের ২৬ সেপ্টেম্বর কবির পরিচালিত এই কারখানাতেই প্রিয়া আক্তার(১৯) নামে এক নারি শ্রমিককে মেশিনে ফেলা হত্যা চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ উঠেছে অসৎ চরিত্রের কিছু শ্রমিক প্রিয়াকে ধর্ষন করতে ব্যর্থ হয়ে চলন্ত মেশিনে তার মাথা চেপে ধরে। এ ঘটনায় প্রিয়া আক্তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখনও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনার পর কিছুদিন ওই কারখানাটি বন্ধ থাকলেও ফের চালু হয়েছে। ওই কারখানা ও প্রিয়ার ঘটনা নিয়ে বরিশালের একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের টনক নড়েনি ।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কোন রকম মাথা না ঘামিয়ে উল্টো সংবাদকর্মীদের কাছে অবৈধ কারখানার তালিকা চেয়েছেন পরিচালক মো.আব্দুল হালিম। সংবাদকর্মীরা কী পরিবেশ অধিদপ্তরের অধীনে চাকুরী করেন? এমন প্রশ্ন করলে এ প্রতিবেদককে কোন উত্তর না দিয়ে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বিভিন্ন গ্রেডের দানা প্রস্তুতকারী এ দুটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কারোই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। প্লাষ্টিক দানা সামগ্রী তৈরির ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শ্রমিকরা স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনেই প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে সেটাই সাধারন মানুষের প্রশ্ন।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মন্তব্য ভিন্নরূপ। তারা বলছে, আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এদেশে সবকিছু করা যায়। কর্তৃপরে গাফিলতি এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিচ্ছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। আমরাও চাই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হোক এক্ষেত্রে।