যৌন নিপীড়কের মুখোশ খুলে দেওয়ার জন্য #মি টু আন্দোলন। কোনো পুরুষের বিরুদ্ধে নয়। ঘরে-বাইরে শিশু ও নারীর নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র তৈরির জন্য #মি টু আন্দোলনে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে এক সংহতি মানববন্ধন থেকে।
আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটায় রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে দেশের নারী সাংবাদিকদের অনেকে ‘#মি টু সংহতি’ মানববন্ধন করেন। ‘যৌন নিপীড়নকে না বলুন, নিপীড়কদের বয়কট করুন’স্লোগানে এ মানববন্ধন হয়।
পশ্চিমা দেশ ছাড়িয়ে পাশের দেশ ভারত হয়ে #মি টু আন্দোলন শুরু হয় বাংলাদেশে। এ দেশের মেয়েরাও এখন নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্তার ঘটনা প্রকাশ্যে তুলে ধরছেন। আজকের মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, এখন পর্যন্ত নয়জন নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্তার ঘটনা জানা গেছে।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, ‘দীর্ঘদিন নিজেদের মধ্যে চেপে রাখা এই নিপীড়নের ঘটনা যাঁরা সামনে এনেছেন, তাঁদের স্যালুট জানাই। আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এসেছি।’ এ আন্দোলন পুরুষদের বিরুদ্ধে নয়, অপরাধীদের বিরুদ্ধে, উল্লেখ করে এই সাংবাদিক নেত্রী বলেন, ‘সব পুরুষ অপরাধী না। অপরাধীরাই পুরুষ সমাজকে কলঙ্কিত করেছে।’ পুরুষদেরও তিনি এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। নিপীড়কদের মুখোশ খুলে দিয়ে তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করারও আহ্বান জানান তিনি।
নিপীড়ক যতই প্রভাবশালী বা গুণী হোক, তিনি নির্যাতন করে পার পেতে পারেন না, বলে উল্লেখ করেন নাসিমুন আরা হক মিনু। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সব কর্মক্ষেত্রে মানা ও সরকার থেকে এ ব্যাপারে বিশেষ সেল গঠন করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। পাঠ্যসূচিতেও এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান নাসিমুন আরা। তিনি জানান, ১৮ নভেম্বর রোববার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আরেকটি মানবন্ধন হবে। সেই মানবন্ধনে তিনি সব শ্রেণিপেশার মানুষকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি মমতাজ বিলকিস বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য #মি টু নিয়ে আলাদা একটি বিভাগ থাকা দরকার, যেখানে নারীরা তাঁদের কথাগুলো বলতে পারেন। বিষয়গুলো এখন সামনে না এলে নারীর প্রতি আচরণের প্রথা বদলাবে না।
‘লজ্জা’ বলে চেপে রাখলে নিপীড়কদের সাহস বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাভিশনের বার্তা সম্পাদক শারমিন রিনভী। তিনি বলেন, ‘এটা মেয়েদের আন্দোলন না। এটা মানুষের আন্দোলন। নিপীড়কের পরিচয় উন্মোচন হোক।’ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো নিপীড়ককে যেন নির্বাচনে প্রার্থী করা না হয়।
নিউজ টোয়েন্টিফোর-এর যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মন্টি বলেন, ‘#মি টু শুধু মেয়েদের না, ছেলেরাও মুখ খুলতে শুরু করেছে। শিশু থেকে শুরু করে ছেলে বা মেয়ে যে কেউ এ ধরনের নিপীড়নের শিকার হতে পারেন। যখন কেউ নিজের নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ করেন, তখন তাঁর সমালোচনা না করে সহানুভূতি দেখাতে হবে।’ বাংলা ট্রিবিউন-এর প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইমন বলেন, ‘অভিযুক্তদের নিয়ে বা আন্দোলন নিয়ে কোনো হাস্যরস করা যাবে না।
শুক্রবারের মানববন্ধনে নাদিবা দিলরুবা ও মুশফিকা লাইজু নিজেদের #মি টু অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
সম্প্রতি দ্য ‘ডেইলি স্টার’-এর এক কর্মীর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির এক সাবেক কর্মীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ফেসবুকে প্রকাশিত হয়। ‘ডেইলি স্টার’ ঘটনাটির তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে। এ ঘটনায় ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ায় মানববন্ধন থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ধন্যবাদ জানানো হয়। বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেসব প্রতিষ্ঠান যেন নিজ উদ্যোগে তদন্ত করে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযোগ জানানোর বিশেষ সেল গঠন করে।
মানববন্ধনের আগে একাত্তর টিভির বিশেষ প্রতিনিধি নাজনীন মুন্নী বলেন, এ দেশে এখন #মি টু নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করার চিন্তা কেউ না করে। যেসব জায়গায় মেয়েদের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেসব জায়গায় মেয়েদের সচেতন করা ও প্রতিষ্ঠানের করণীয় বিষয়ে ক্যাম্পেইন করা হবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া তিনি বলেন, এটা সামাজিক আন্দোলন।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক রোখসানা ইয়াসমিনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন অনলাইন জার্নালিস্ট ফোরামের সহসভাপতি রোজী ফেরদৌস, সাংবাদিক সাজেদা হক, চ্যানেল নাইন থেকে সাইদা জোহরা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের নাসিমা সোমা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী শুভ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাংবাদিক কবীর আহমেদ খান, সাংবাদিক ফাহমিদা আকতার, রিতা নাহার, শাহনাজ শারমিন, ইয়াসমিন হাসি, রিফাত ফাতেমা প্রমুখ।