নানা পদক্ষেপের পরও পেঁয়াজের দামের পাগলা ঘোড়ার রাস কিছুতেই টেনে ধরতে পারছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে ইস্যু বানিয়ে এই নিত্যপণ্যটির দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। গতকাল বুধবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দৈনিক আমাদের সময়
অবশ্য কোথাও কোথাও একই মানের পেঁয়াজ ১৫০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, মিসরের ১৩০ টাকা এবং তুরস্ক থেকে আনা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। অথচ গত মঙ্গলবারও এসব পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কম ছিল।
মালিবাগ বাজারের খোরশেদ বাণিজ্যালয়ের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় আমরাই পেঁয়াজ পাইনি। অন্যান্য সময় তিন-চার বস্তা করে কিনলেও মঙ্গলবার দেশি ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ পেয়েছি কেবল দুই বস্তা করে।
একই বিষয়ে আবার ভিন্নমত পোষণ করেছেন অন্য বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পরিবহনে বিঘœ ঘটলেও বাজারে পণ্য মজুদের ওপর তার প্রভাব পড়তে অন্তত দুই থেকে তিন দিন সময় লাগার কথা। অথচ ঝড়ের পরদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এর পেছনে আমদানিকারক ও দুষ্ট ব্যবসায়ী চক্রের কারসাজি তো আছেই; সেই সঙ্গে সরকারের ব্যর্থতাও রয়েছে। তাদের মতে, সরকার বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করলেও তা আমলে নেয়নি আমদানিকারকরা। দফায় দফায় বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তারা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখানে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজি তেমন একটা নেই। আমদানিকারকদের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী তারা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। তবে রাজধানীর বেশকিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, বিশেষ করে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা আমদানির পর দ্বিতীয় দফায় দাম বাড়িয়ে বাজারে পেঁয়াজ ছেড়েছেন।
শ্যামবাজারের লাকসাম বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান অবশ্য বলেন, আমদানিকারকরা বিভিন্ন সময়ে সরবরাহ কমিয়ে, চালান দেরি করে দাম বাড়িয়েছেন। তার পর তারা যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেই বাড়তি দামেই বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। সেগুলো পাইকারি বাজারে পৌঁছানোর পর আবারও দাম বাড়িয়েছে কিছু লোভী ব্যবসায়ী। চালান কম থাকায় শেষ দিকে পাইকারি বাজারে সব আড়তদার পেঁয়াজও পাননি। এ সুযোগে সেই লাভের গুড় খেতে মরিয়া হয়ে উঠছে অনেকে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা সবসময়ই সুযোগসন্ধানী। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই তা লুফে নেন। সেটি যৌক্তিক না অযৌক্তিক, সে বিষয়ে মাথা ঘামান নাÑ এটি ঘোর অন্যায়। ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন তারা।