রাজধানীর সিগন্যাল বাতি গাড়ির গতি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে অনেক আগেই। এরপর ফেল মারল হাতের ইশারা আর বাঁশিও।
তাই অবশেষে বাঁশ ও দড়ি দিয়ে চলছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এবং ভিআইপি সড়কগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে দড়ি আর বাঁশের ব্যবহার। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, দুর্ঘটনা ঠেকাতে ও যানজট কমাতে নিতে হয়েছে এ ব্যবস্থা।
সরজমিনে বিজয় সরণি এলাকায় দেখা যায়, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সিগন্যাল পড়লেই দড়ি বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ হাতের ইশারায় গাড়ি থামিয়ে দড়ি টেনে নিয়ে গিয়ে বাঁধছেন। আবার সিগন্যাল ছাড়লে খুলে দেওয়া হচ্ছে দড়ি। এ রাস্তায় দড়ি ব্যবহূত হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ আবুল কালাম বলেন, ‘হাত দেখালেও থামে না গাড়িগুলো। অন্য দিক থেকে গাড়ি চলে আসায় অনেক সময় ঘটে যায় দুর্ঘটনা কিংবা তৈরি হয় যানজট।
তাই দড়ি দিয়ে বেঁধে দিই, যাতে সামনের দিকে যেতে না পারে। ’ রাজধানীর পান্থপথেও চোখে পড়ে একই চিত্র। অফিস সময়ে যানবাহনের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। তাই দড়ি দিয়ে রাস্তার দুপাশ বেঁধে থামানো হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। বিমানবন্দর এলাকায় দেখা যায়, বাঁশ দিয়ে লেন ও ফুটপাত চিহ্নিত করা হয়েছে। রাস্তার মধ্যে রাখা ডিভাইডারের মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বাঁশ। একই অবস্থা মহাখালীর রাস্তাতেও। ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের উপকমিশনার লিটন কুমার সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মোটরসাইকেলগুলো হাতের ইশারা না মেনে বেরিয়ে যায়, থামানো যায় না। তাই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নাইলনের দড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা রঙিন দড়ি বাঁধেন। এতে দূর থেকে দেখা যায়। এখানে আসে বাঁশকল লাগানোর কথা। কিন্তু এ রোডে সেটা সম্ভব না। তাই যানজট আর দুর্ঘটনা ঠেকাতে দড়ি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
ঢাকার যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যালের কাজে গত ১৭ বছরে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০০ সালের দিকে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় ৭০টি জায়গায় আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানোর কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০০৮ সালে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার না হওয়ায় অল্প দিনেই বেশির ভাগ বাতি অকেজো হয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১০-১১ অর্থবছরে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) নামে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সরঞ্জাম কেনা হয়। এর আওতায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯২টি মোড় বা ইন্টারসেকশনে সোলার প্যানেল, টাইমার কাউন্ট-ডাউন, কন্ট্রোলার ও ক্লেব স্থাপন করা হয়। এ স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থাও এখন অকার্যকর। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও পুলিশ আধাস্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। নতুন পদ্ধতিতে মোড়ে দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের হাতে থাকবে রিমোট কন্ট্রোল। যে সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকবে, রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যরা সেখানে সবুজ বাতি জ্বালাবেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন ও সংস্থার মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। ফলে এ উদ্যোগটিও বিফলে যায়।