গত ৫ আগস্ট তীব্র প্রাণঘাতী গণআন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে, একচেটিয়া ভুয়া তথ্য আর গুজব প্রচার করে আসছে বেশিরভাগ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। এসব প্রতিবেদনের বেশিরভাগ একপাক্ষিক এবং ধারণাপ্রসূত।
এবার চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের হাতে খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার বিষয়েও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতের অনেক সংবাদমাধ্যম। শুধু তাই নয়, ভারতের অনেক এক্স (সাবেক টুইটার) একাউন্ট থেকে এই খুনের ঘটনা ভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম রিপাবলিক মিডিয়া নেটওয়ার্কের ইংরেজি ভাষার চ্যানেল থেকে দাবি করা হয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর হয়ে আইনি লড়াই করছিলেন মুসলিম আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। আর পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষে সাইফুল খুন হয়েছেন।
ওপি ইন্ডিয়া নামে আরেক ওয়েবসাইট থেকে একই দাবি করা হয়। শুরুতে তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল- ‘Muslim lawyer defending ISKCON monk Chinmoy Krishna killed amid protests’।
পরে তারা শিরোনাম পাল্টে লিখে, ‘Bangladesh: Chittagong lawyer killed amid violent protests following the arrest of ISKCON monk Chinmoy Krishna Das’।
এসব বিভ্রান্তিকর খবরের জবাব দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
বুধবার সামাজিকমাধ্যমের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করছে, আজ (মঙ্গলবার) চট্টগ্রামে নির্মমভাবে খুন হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। দাবিটি মিথ্যা এবং খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে’।
এতে আরো বলা হয়, ‘চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ওকালতনামা অনুযায়ী, তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শুভাশীষ শর্মা। আমরা সকলকে যেকোনো প্রকার উস্কানিমূলক, মিথ্যা প্রতিবেদন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি’।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারত থেকে একের পর এক ভুয়া তথ্য প্রচার জনমানসে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। যা এখানে হিংসা এবং সংঘাতে উসকানি দিচ্ছে। গত কয়েক মাসের প্রতিবেদন যাচাই করলে দেখা যায়, রিপাবলিক মিডিয়া নেটওয়ার্ক এসব অপতথ্যের সবচেয়ে বড় সরবরাহক।
এদিকে একই দিনে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার এবং জামিন আবেদন নামঞ্জুর করার ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিরও প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একটি বিষয়ে আজ (২৬ নভেম্বর ২০২৪) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি বিবৃতি সরকারের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। অত্যন্ত হতাশা ও অত্যান্ত পরিতাপের সাথে বাংলাদেশ সরকার লক্ষ্য করছে যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতারের পর থেকে একটি মহল ভুল ধারণা পোষণ করছে। এই ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু সত্যকে বিকৃত করে না বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থী।’