22 C
Dhaka
নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
জাতীয় রাজণীতি সরকার

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও আসছে ব্যাপক রদবদল

আর মাত্র এক মাস পরেই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারও জাতীয় সম্মেলনে সবচেয়ে আলোচনার বিষয় দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ। এবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ব্যাপক রদবদল আসছে, এটা নিশ্চিত। এরইমধ্যে ‘দলে সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তন হচ্ছেন’- এমন গুঞ্জন যেমন রয়েছে তেমনি ‘ওই পদটি অপরিবর্তনীয় থাকছে’ এমন আলোচনাও রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দলের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজনের নাম এখন আলোচনায়। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন সে বিষয়ে দলের কেউই এখনও পরিষ্কার নন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এরইমধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগে শীর্ষ নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন এনেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এটা আসলে একটা ইঙ্গিত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির জন্যও। এর আগে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েন ৫০ জন এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৪৩ জনের মধ্যে ৪১ জনই বাদ পড়েন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা মনোভাব প্রকাশ করেছেন, দলীয় হাইকমান্ড দীর্ঘদিন থেকেই দলের মধ্যে তারুণ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছে। যা দেখে মনে হতে পারে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবারের পর পরিবর্তন আসতে পারে। হয়তো এ চিন্তা থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের পরিবর্তনের প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে এবার পদে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, এবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বাদ পড়বেন অনেক ‘প্রভাবশালী ও হেভিওয়েট’ নেতা, যার সংখ্যা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট সংখ্যার অর্ধেক। নতুন নেতৃত্বে কারা আসবেন তা নিয়ে দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের আমলনামার বিশ্লেষণ চলছে। তবে দলের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির কলেবর বাড়ছে না। এখনও দলের কোনো কেন্দ্রীয় নেতাই বলতে পারছেন না আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে কে শেষ পর্যন্ত আসছেন। সম্মেলনে তরুণ নেতৃত্বকে এবার গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি যারা ক্লিন ইমেজের ও অতীতে ত্যাগ শিকার করেও এখনো তেমন কিছুই পাননি তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতেই একটি সদস্য ও সভাপতিমণ্ডলীর দুটি সদস্য পদ খালি আছে। সেগুলো এই মুহূর্তে পূরণ হবে না। সম্মেলনের পর সেগুলো পূরণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কমিটির কলেবর আগের মতোই থাকছে। অর্থাৎ কমিটি ৮১ সদস্যেরই থাকছে।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদক ও গুরুত্বপূর্ণ পদে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকের পদোন্নতি ও অনেকের পদাবনতি হতে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দলের কোনো কাজেই যাদের দেখা যায়নি এমন নেতারা বাদ পড়তে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সারা দেশে দলের তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগের কর্মঠ, ত্যাগী ও স্বচ্ছভাবমূর্তির কয়েকজন নেতাকে পুরস্কৃত করা হবে। নতুন ও তরুণ নেতৃত্বের জন্য আওয়ামী লীগে সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাও আসতে যাচ্ছেন।

সম্পাদকমণ্ডলীর অনেক সদস্য মন্ত্রিসভায়, আগামী সম্মেলনে সেখানে নতুন মুখ কারা আসছেন এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা ডিসাইড করার মালিক আমাদের সভাপতি, এটা আমাদের গঠনতন্ত্রে ক্ষমতা দেয়া আছে। আমাদের নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, তিনি নির্ধারণ করবেন কে আসবে দলে। আমাদের দলে শেখ হাসিনা ছাড়া আরও কেউ অপরিহার্য ব্যক্তি নয়। আমি আপনাদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমরা কেউই অপরিহার্য নই।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলের মধ্যে চলমান শুদ্ধি অভিযানের প্রভাব পড়বে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও। যারা এরইমধ্যে বিতর্কিত, তারা কমিটিতে স্থান পাবেন না। নতুন-পুরনো মিলেই কমিটি হবে। সভাপতিমণ্ডলী থেকে কেউ উপদেষ্টাও হতে পারেন। আবার উপদেষ্টা থেকে সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম সম্পাদক পদ থেকে সদস্য কিংবা সদস্য থেকে যুগ্ম সম্পাদকও হতে পারেন। কমিটি থেকে বাদও পড়তে পারেন অনেকে। আসতে পারে নতুন মুখ।

দলের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক পদেও নেত্রী না ইচ্ছা করবেন, সেটাই হবে। তিনি পরিবর্তন চাইলে, পরিবর্তন হবে। আমাদের এখানে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। হয়তো কারও কারও ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। সাধারণ সম্পাদক পদেও প্রার্থী থাকতে পারে। সেখানে কোনো অসুবিধা নেই। আমি যদি মনে করি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ হতে পারবে না, এটা তো ঠিক না। এটা ডিসাইড করবেন নেত্রী, তবে প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবার আছে।’

দলের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা সাংবাদিকদের বলেন, অতীতে দলে অনেক কেন্দ্রীয় ও বড় নেতা ছিল। যাদের সারা দেশের প্রতিটি অলিতে-গলিতে চিনতো। যাদের দলের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কার্যকর গ্রহণযোগ্যতা ছিল। সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের যিনি আন্দোলিত করতে পারেন। বর্তমানেও যিনি সাধারণ সম্পাদক তারও তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে এমনই একজন আসবেন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, দলের তৃণমূল ও জনগণের প্রত্যাশা ছাড়াও দল ও রাজনীতির জন্য যিনি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হবেন তাকেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। এখানে যোগ্যতাই একমাত্র মাপকাঠি।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের অপরিবর্তনীয় থাকার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ তিনি বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকলেও এখন অনেকটাই সুস্থ্ রয়েছেন। আবারও তার এ পদে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

দলীয় অপর সূত্রগুলো বলছে, এবার দলের সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদল প্রায় পাকাপাকি। যার অনেক ইঙ্গিত দলীয় প্রধানের কাছ থেকে তারা পেয়েছেন। নানা দিক থেকে দলে অন্তত ৭ জন নেতাকে নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদক পদে রদবদল হলে তাতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেই আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ পদের ৩ জনই আলোচনায় রয়েছেন। এই তিন জনের মধ্যে থেকে যিনি দলের জন্য গত কয়েক বছরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কর্মঠ ভূমিকায় ছিলেন তার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে গত এক বছর দলের অনেক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। যারা বর্তমানে দলের সকল কর্মকাণ্ডেই যুক্ত থাকছেন। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করছেন। তাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদেই রাখা হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ১৭ সদস্যবিশিষ্ট সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে বাদের তালিকায় আছেন কমপক্ষে ১০ জন। বাদ পড়াদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, যারা এবার উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেতে যাচ্ছেন। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ৩ জন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হতে পারেন বলে দলে আলোচনা রয়েছে। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে অনেকেই বিতর্কিত হওয়ায় বাদ পড়তে পারেন। দলে নিষ্ক্রিয়তা, কমিটি বাণিজ্য, নিজ এলাকায় দলীয় কোন্দল নিরসন করতে না পারাই এর মধ্যে অন্যতম কারণ। তবে নানা কারণে আবার কয়েকজন তরুণ নেতা এবার তাদের কাজের জন্যও পুরষ্কৃত হতে যাচ্ছেন। দলের ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকের অধিকাংশই এবার বাদ পড়তে পারেন। সম্পাদকমণ্ডলীর আরও কয়েকটি পদে পরিবর্তন আসতে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট

কুরআনের আয়াত পোস্টের সঙ্গে ২ ছবি শেয়ার, কী বার্তা দিলেন আসিফ নজরুল

banglarmukh official

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্মান জানানোয় গোটা জাতি আনন্দিত

banglarmukh official

অবরুদ্ধ পেট্রোবাংলা, ভেতরে আটকা শত শত কর্মকর্তা

banglarmukh official

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা বলল যুক্তরাজ্য

banglarmukh official

ইতিহাসে অবিস্মরণীয় নাম মাওলানা ভাসানী: তারেক রহমান

banglarmukh official

গরুর মাংসের দাম এখনও নাগালের বাইরে: ফরিদা আখতার

banglarmukh official