23 C
Dhaka
নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bangla Online News Banglarmukh24.com
অন্যান্য ফটো ফিচার

আজ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা বসু মাসীমা’র ১২০ তম জন্মদিন

হুজাইফা রহমান:

মনোরমা বসু মাসীমার জন্ম ১৮৯৭ সালের ১৮ নভেম্বর বরিশাল জেলার বানারীপাড়ায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। আশৈশব দারিদ্র্য তাঁকে কঠোর সাধনায় সিদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। তিনি নিজের জীবনে শিক্ষার তেমন সুযোগ পাননি, কিন্তু সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ ও চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। জন্মস্থানের অনুকূল পরিবেশ মনোরমা বসুকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। তাই মাত্র এগারো বছর বয়সে ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। চৌদ্দ বছর বয়সে বরিশালের বাঁকাই গ্রামের জমিদার চিন্তাহরণ বসুর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয় এবং স্বামীর প্রত্যক্ষ সমর্থনে তিনি স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। জমিদার বাড়ির রক্ষণশীলতা ও বিধিনিষেধ অতিক্রম করে তিনি মুক্ত জীবনে প্রবেশ করেন। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ও সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তিনি জমিদার বাড়ি ছেড়ে বরিশালে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। বরিশালে অবস্থানকালে মনোরমা স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং নারী অধিকার রক্ষায় ‘সরোজনলিনী মহিলা সমিতি’র শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে এটিই ছিল প্রথম মহিলা সংগঠন। এ সমিতির মাধ্যমেই তিনি নারী সমাজকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন।

১৯৩০ সালে তিনি কংগ্রেস মহিলা কর্মী হন এবং ১৯৩২ সালে কংগ্রেসের ডাকে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। এ সময় বহরমপুর জেলে তিনি উর্মিলা দেবী (দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের বোন), জ্যোতির্ময়ী দেবী প্রমুখ প্রখ্যাত কংগ্রেস নেত্রীর সান্নিধ্য লাভ করেন।মনোরমা বসু ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সমাজসেবক এবং স্বদেশী আন্দোলনের নেত্রী।। তিনি অনাথ ও দুঃস্থ মহিলাদের, বিশেষ করে বিধবা ও কুমারী মেয়েদের আশ্রয় দানের জন্য বরিশালের কাউনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘মাতৃমন্দির আশ্রম’। আজীবন তিনি এটি পরিচালনা করেন। চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। তিনি ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’র বরিশাল জেলা শাখার অন্যতম নেত্রী ছিলেন।

১৯৪৩-৪৪ সালে দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর সময় লঙ্গরখানা, চিকিৎসালয় ও উদ্ধার আশ্রম স্থাপন এবং পুনর্বাসন কাজে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন নারী আন্দোলন, সমাজসেবা ও রাজনৈতিক কাজের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বরিশাল জেলা শাখা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি নারীমুক্তি আন্দোলনকে গতিশীল করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পরিষদের সহসভানেত্রী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর নতুন শাসকদের শাসন ও শোষণ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালে বরিশালের খাদ্য-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তিনি এক বছর সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করেন এবং সে সঙ্গে জননিরাপত্তা আইনে আরও তিন বছর কারাভোগের পর ১৯৫২ সালের ২৫ এপ্রিল মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালের ১০ এপ্রিল স্বামীর মৃত্যুতে তিনি কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সে আঘাত কাটিয়ে উঠে তিনি পুনরায় স্বীয় কর্মকান্ড শুরু করেন।

১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে মনোরমা বসু আত্মগোপন করেন এবং সে অবস্থা থেকে আত্মপ্রকাশের পর তিনি ‘মাতৃমন্দির আশ্রম’-এর কাজে ব্যস্ত থাকেন। একই সঙ্গে গড়ে তোলেন আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লিকল্যাণ অমৃত পাঠাগার (শহীদ অমৃতলালের নামে), আর শিশুদের জন্য মুকুল মিলন খেলাঘর। তাঁর অবর্তমানে মাতৃমন্দিরের কার্যনির্বাহের জন্য নিজের সব সম্পত্তি মন্দিরের নামে দান করে যান।১৯৬২ ও ৬৪’র গণআন্দোলন এবং ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে মহিলাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। দেশপ্রেম, সমাজসেবা ও মানুষের প্রতি ভালবাসার কারণে দলমত-নির্বিশেষে সকলে তাঁকে ‘মাসীমা’ বলে ডাকত। বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী, দৃঢ়চেতা, পরোপকারী এবং আদর্শনিষ্ঠ মনোরমা বসুর সমগ্র জীবন ছিল দেশপ্রেমে নিবেদিত। তিনি ছিলেন সাম্যবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত এবং যেকোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চারকণ্ঠ। তাঁর জীবদ্দশাতেই সত্যেন সেনের মনোরমা মাসীমা গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়

সম্পর্কিত পোস্ট

জামান পার্কে ইমরানের স্ত্রী, বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন

banglarmukh official

এইচএসসির ফলাফল ঘোষণায় নতুন সিদ্ধান্ত

banglarmukh official

মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালুর আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

banglarmukh official

চীন-বাংলাদেশ সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু

banglarmukh official

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো রিপোর্টার হলেন সাংবাদিক এস এন পলাশ

banglarmukh official

শুভ জন্মদিন সাংবাদিক মাহাবুব আলম শ্রাবণ

banglarmukh official