দেশের বাঘা বাঘা সব ব্যবসায়ীকে ঠেলে আবারও শীর্ষ করদাতা হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন হাকিমপুরী জর্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. কাউছ মিয়া।গত কয়েক বছর ধরে তিনি এ জায়গাটি পাকা করে রেখেছেন।বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সেরা করদাতাদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানেই ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে এ তামাক ব্যবসায়ীর নাম সবার ওপরে।জানা যায়, ৫০ এর দশকে হাকিমপুরী জর্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. কাউছ মিয়া তার ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাত্র আড়াই হাজার টাকা নিয়ে।তিনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন চাঁদপুরে, সেখানে ছিল তার স্টেশনারী দোকান। এর পরের ২০ বছরে ধীরে ধীরে তার ব্যবসা বাড়তে থাকলে তিনি চলে আসেন নারায়ণগঞ্জে। শুরু করেন তামাকের ব্যবসা।তখন তামাক বাংলাদেশে চাষ হতো না। পাকিস্তানের মারদান থেকে আসতো। তামাকের ব্যবসা থেকেই তার মাথায় আসে জর্দা উৎপাদনের কথা। সেখান থেকে আজ তার শীর্ষ ব্যবসায়ী, শীর্ষ করদাতা হয়ে ওঠা।এনবিআরের ঘোষণা অনুযায়ী, করদাতাদের উৎসাহ ও স্বীকৃতি প্রদানের অংশ হিসেবে এবার ৭৬ ব্যক্তি, ৫৫টি কোম্পানি ও অন্যান্য ১০ মিলে ১৪১ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ সময় আয়কর প্রদানকারী করদাতা ট্যাক্সকার্ড প্রদান করা হবে।অপরদিকে জেলাভিত্তিক সর্বোচ্চ ও দীর্ঘ সময় আয়কর প্রদানকারী করদাতাদের পুরস্কার নীতিমালা অনুযায়ী ৫১৫ জনকে পুরস্কৃত করা হবে।আগামী ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত আয়কর মেলায় এই ট্যাক্স কার্ড প্রদান করা হবে।প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এই ১৪১ করদাতা পাচ্ছেন এবারের পুরস্কার।
সিনিয়র সিটিজেন : এ শ্রেণিতে ট্যাক্সকার্ড পাচ্ছেন গোলাম দস্তগীর গাজী, তপন চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার বদরুল হাসান, স্যামুয়েল এস চৌধুরী ও অনিতা চৌধুরী।
জেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা : লেফট্যানেন্ট জেনারেল আবু সালেহ মো. নাসিম (অব.), মো. নাসির উদ্দিন মৃধা, এস এম আবদুল ওয়াহাব, মো. ইদ্রিস আলী মিয়া এবং মো. আতাউর রউফ।
প্রতিবন্ধী : চট্টগ্রামের সুকর্ণ ঘোষ, সিলেটের মো. মামুনুর রশিদ ও রাজশাহীর ড. কাজী আখতার হোসেন।
নারী : ঢাকার রুবাইয়াত ফারজানা হোসেন, রাজশাহী কর অঞ্চলের রত্না পাত্র, ঢাকার পারভীন হাসান, রংপুরের নিশাত ফারজানা চৌধুরী ও ঢাকার মাহমুদা আলী শিকদার।
তরুণ (৪০ বছরের নীচে) : এলটিইউর করদাতা নাফিস সিকদার, ঢাকার গাজী গোলাম মতুর্জা, মো. হাসান, জুলফিকার হোসেন মাসুদ রানা এবং চট্টগ্রামের মো. আমজাদ খান।
ব্যবসায়ী : এ শ্রেণিতে রয়েছেন ঢাকার মো. কাউছ মিয়া, আব্দুল কাদির মোল্লা, কামরুল আশরাফ খান, এলটিইউর সৈয়দ আবুল হোসেন এবং মো. নুরুজ্জামান খান।
বেতনভোগী : লায়লা হোসেন, মোহাম্মদ ইউসুফ, হোসনে আরা হোসেন, খাজা তাজমহল এবং এম এ হায়দার হোসেন।
ডাক্তার : এ শ্রেণিতে ঢাকার এ কে এম ফজলুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, জাহাঙ্গীর কবির, এন এ এম মোমেনুজ্জামান ও মো. নুরুল ইসলাম।
সাংবাদিক : প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মালেক এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম।
আইনজীবী : এ শ্রেণিতে ঢাকার মাহবুবে আলম, শেখ ফজলে নূর তাপস, আহসানুল করিম, কাজী মুহাম্মদ তানজীবুল আলম ও নিহাদ কবির।
খেলোয়াড় : এ শ্রেণিতে রয়েছেন তিন ক্রিকেটার। মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান।
অভিনেতা/অভিনেত্রী : এ শ্রেণিতে রয়েছেন মাহফুজ আহমেদ, এম এ জলিল অনন্ত এবং এস এ আবুল হায়াত।
শিল্পী : এ শ্রেণিতে রয়েছেন রুনা লায়লা, তাহসান রহমান খান ও এস ডি রুবেল।
স্থপতি : তিনজন পাবেন এ ট্যাক্সকার্ড। তারা হলেন ফয়েজ উল্লাহ, হাসান সামস উদ্দীন ও ইকবাল হাবিব।
প্রকৌশলী : চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, রাজশাহীর মো. হাফিজুর রহমান ও বগুড়ার মোহাম্মদ হামিদুল হক।
হিসাবরক্ষক : ঢাকার মো. মোক্তার হোসেন, এম বি এম লুৎফুল হাদী ও বিমলেন্দু চক্রবর্ত্তী।
নতুন করদাতা : ঢাকার মিয়া মনিকা রফিকুলোভনা, তাফিজুল ইসলাম পিয়াল ও সাইফুল ইসলাম, সিলেটের রানা মালিক, মোসাম্মাৎ সেলিনা আক্তার ও রাসেল রায় এবং রাজশাহীর মোছা. ছিয়াতুন নেছা।
অন্যান্য : এলটিইউর করদাতা এ শ্রেণিতে পাচ্ছেন সদর উদ্দিন খান, আবু মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন খান ও নজরুল ইসলাম মজুমদার।
ব্যাংকিং : ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি, সাউথইস্ট ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান : আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড এবং উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক : নেসলে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও ট্রান্সকম বেভারেজেস।
প্রকৌশল : এ শ্রেণিতে বিএসআরএম স্টিলস, পিএইচপি কোল্ড রোলিং মিলস এবং পিএইচপি নফ কন্টিনিউয়াস গ্যালভানাইজিং মিলস কার্ড পাচ্ছে।
তৈরি পোশাক : রিফাত গার্মেন্টস, জিএমএস কম্পোজিট, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার, ফোর এইচ ফ্যাশন, কেডিএস গার্মেন্টস ও অ্যাপেক্স লেনজারি।
এ ছাড়া টেলিযোগাযোগে গ্রামীণফোন, জ্বালানিতে তিতাস গ্যাস, সিলেট গ্যাস ও শেভরন বাংলাদেশ, পাটশিল্পে জনতা জুট, সুপার জুট ও আইয়ান জুট, আবাসনে স্পেসজিরো, বে ডেভেলপমেন্টস ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স, চামড়াশিল্পে বাটা সু, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও লালমাই ফুটওয়্যার, অন্যান্য শ্রেণিতে ব্রিটিশ–আমেরিকান টোব্যাকো, মেটলাইফ, লাফার্জহোলসিম ও নিটল মোটরস। অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ফার্ম পর্যায় ছাড়া আরও ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ডের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।