প্রিন্স মুন্সি
বরিশাল জেলা সদরের চরমোনাই ইউনিয়নের অন্তর্গত চরমোনাই মাদরাসা মাঠে ৩ দিন ব্যাপী অগ্রহায়ণের বার্ষিক মাহফিল শুরু হয়েছে। রোববার যোহরের নামাজের পর আমীরুল মুজাহিদীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা সৈয়দ মো: রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই-এর উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মাহফিল শুরু হয়।
পীর সাহেব চরমোনাই তার বয়ানে বলেন, আমাদের দুনিয়ার জীবনের সকল কাজ, কামাই, রোজগার, মাহফিল ইত্যাদি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করতে হবে। আপনারা অনেক কষ্ট করে মাহফিলে হিজরত করে এসেছেন। কিন্তু আপনারা এত কষ্ট করে এসে পরিবার-পরিজন ছেড়ে, এখানে বাথরুম, খানা, ঘুমানোসহ সবসময় কষ্ট সহ্য করেও যদি নিয়ত ঠিক না হয়, কোনো লাভ হবে না। মরহুম পীর সাহেব বলতেন, মাহফিল শুরুর পূর্বে নিয়ত ঠিক করে নিতে হবে, এখানে আসলে কেউ ধনী হবে না, কারো রোগের চিকিৎসাও এখানে হয় না, অন্য কোনো দুনিয়াবী উদ্দেশ্য এখানে হাসিল হবে না, এখানে একমাত্র আল্লাহকে পাওয়ার রাস্তা দেখানো হয়।
এজন্য তিনি সকলকে নিয়ত সহীহ করে মাহফিলে অবস্থানসহ সকল কাজ করার আহবান জানান। তাহলে দুনিয়াবী কোনো মকসুদ থাকলে তা কবুল হলেও সহীহ নিয়তের কারণে সওয়াবসহ হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে। আমীরুল মুজাহিদীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা সৈয়দ মো: রেজাউল করীম বলেন, এখানে আপনারা আসছেন রোগী হিসেবে। এই তিনদিনে আপনাদেরকে প্রেসক্রিপশনও দেয়া হবে, ইনশাআল্লাহ। যারা এই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলতে পারবেন তারা রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়তে পারবেন। আর যদি এখানে মাহফিলের পক্ষ থেক এই লক্ষ লক্ষ মানুষের খাওয়ার আয়োজন করা হতো, তাহলে দেখা যেতো যে, খানার আঞ্জাম দিতে গিয়ে আসল উদ্দেশ্যই হাসিল হতো না। এজন্য এখানে আমরা এই ব্যবস্থা করিনি।
পীরসাহেবের বয়ানের পূর্বে ও যোহরের নামাজ আদায়ের পর বিশ্বজয়ী হাফেজ তরীকুল ইসলামের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মাহফিলের কার্যক্রম শুরু হয়। ৩ দিন ব্যাপী মাহফিলে প্রতিদিন ফজর ও মাগরীবের নামাজের পর পীর সাহেব ও তার ভাই মুফতী সৈয়দ মো: ফয়জুল করীম (পীরে কামেল চরমোনাই)-এর বয়ান ছাড়াও দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম বয়ান পেশ করবেন। ওলামায়ে কেরামের মধ্যে রয়েছেন মাওলানা মোবারক করীম, প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মুফতী সৈয়দ এছহাক মোঃ আবুল খায়ের, মরহুম পীর সাহেবের খলিফা মাওলানা আব্দুর রশিদ (পীর সাহেব বরগুনা), আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী (পীর সাহেব কারীমপুর), অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ (পীর সাহেব খুলনা) উল্লেখযোগ্য।
মাহফিল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মুসল্লীদের অবস্থানের জন্য ২টি মাঠে (১ ও ৩নং) সামিয়ানা টানানো হয়েছে। মাহফিলের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ-র্যাব ছাড়াও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। নিজস্ব প্রায় ১০০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে সবকটি মাঠের নিরাপত্তা মনিটরিং করা হচ্ছে। হাজারো মাইকের মাধ্যমে সব মাঠে বয়ান শোনার ব্যবস্থা আছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাই ভোল্টেজ অটো জেনারেটর রয়েছে। মুসল্লীদের খাবার পানি ও ওযু-গোছলের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে সবকটি মাঠে।
মুসল্লীদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে একটি হাসপাতাল রয়েছে। দেশের মুসল্লীদের পাশাপাশি মাহফিলে দেশ-বিদেশের আলেম-ওলামা ও বিশিষ্ট মেহমানদের জন্য রয়েছে আলাদা মেহমানখানা। দেশ-বিদেশ থেকে ঘরে বসে যাতে সবাই মাহফিলের ভিডিওসহ বয়ান শুনতে পারে সেজন্য www.charmonaivs.net/live এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। ৩ দিন ব্যাপী মাহফিলে নিয়মিত বয়ান ছাড়াও ২য় দিন বেলা ১১টায় ওলামা ও সূধী সম্মেলন এবং ৩য় দিন বেলা ১১টায় ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে।