খুলনা প্রতিনিধি//জান্নাতুল ফেরদৌস:
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় ইতোমধ্যে ৩৪৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য খুলে রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে দুর্যোগকালীন করণীয় সম্পর্কে ইতোমধ্যে বার্তা পৌঁছানো হয়েছে এবং খুলনায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষও খোলা হয়েছে যার নম্বর ০৪১-২৮৩০০৫১। এছাড়া খুলনা সিটি করপোশেনের উদ্যোগে নগর ভবনের ২য় তলায় কন্ট্রোল রুম খোলা (কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ০৪১-২৮৩২৯৭৭) হয়েছে। দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য নগরীর ৩১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সভায় দুর্যোগকালীন যে কোন প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকালে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা খুলনা সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে ইতোমধ্যে রাসমেলামুখী সকল নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রেডক্রিসেন্টসহ উদ্ধারকর্মীরা প্রস্তুত আছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, অর্থ, ওষুধ এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগ, মৎস্য বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ, কৃষি বিভাগসহ সকল বিভাগ তাদের অধিক্ষেত্রে সম্পদ রক্ষার সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটায় আক্রান্ত প্রবণ এলাকা। এই সকল এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা জারি ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে একই স্থানে খুলনার ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার সুবাস চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে খুলনা বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে যে নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি খোলা হয়েছে তার নম্বর-০৪১-৮১৩৯৪০ এবং ০৪১-৮১৩৯৮১। সভায় জানানো হয়, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কেসিসির প্রস্তুতি : ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ খুলনাঞ্চলে আঘাত হানার আশংকা থাকায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সম্ভব সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগর ভবনের জিআইজেড মিলনায়তনে দুর্যোগকালীন অথবা দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। সভায় কেসিসি’র জরুরী সেবা কাজে নিয়োজিত বিভাগসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল, দুর্যোগ বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন করার জন্য মাইকিং, স্কুল-কলেজের ভবনসমূহ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা, মেডিকেল টীম গঠন, এ্যাম্বুলেন্স-ফায়ার সার্ভিসসহ জরুরী সেবাকর্মে নিয়োজিত বিভাগগুলিকে প্রস্তুত রাখা, জরুরী ত্রাণ সামগ্রী ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিটি মেয়র দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেন। কেসিসি’র দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শেখ মোসারাফ হোসেন, সদস্য মো: গোলাম মওলা শানু, শেখ এমডি মাহফুজুর রহমান লিটন, কাজী তালাত হোসেন কাউট, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মাহমুদা বেগম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) পলাশ কান্তি বালা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো: আব্দুল আজিজ, বাজেট কাম একাউন্টস অফিসার এম এম হাফিজুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) লিয়াকত আলী খান, নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান, জাহিদ হোসেন শেখ, চীফ প্লানিং অফিসার আবির উল জব্বার, ভেটেরিনারী সার্জন ডা. মো: রেজাউল করিম, সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরীফ শাম্মিউল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ হোসেন, শেখ মো: মাসুদ করিম, রাজস্ব কর্মকর্তা মো: অহিদুজ্জামান খান, এস্টেট অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।