যুক্তরাজ্যের রানির দেওয়া অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মানজনক উপাধি ‘নাইট’ পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আখলাকুর রহমান চৌধুরী। দেশটির হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগের অংশ হিসেবে তাঁকে এ উপাধি দেওয়া হয়। এখন থেকে তিনি ‘স্যার আখলাকুর রহমান চৌধুরী’ হিসেবে পরিচিত হবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদ ‘বাকিংহাম প্যালেসে’ রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আখলাকুর রহমানকে ‘নাইট’ উপাধি প্রদান করেন। এদিন দেশটির হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়া মোট ১১ জন বিচারককে এ উপাধি দেওয়া হয়।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে আখলাকুর রহমান চৌধুরী প্রথম কোনো ব্যক্তি, যিনি এ উপাধি পেলেন। আর বাঙালিদের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম বাঙালি হিসেবে ‘নাইট’ খেতাব পেয়েছিলেন। আর দ্বিতীয় বাঙালি এবং প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে এ গৌরবময় উপাধি অর্জন করেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম কোনো ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান আখলাকুর রহমান চৌধুরী। গত ২ অক্টোবর থেকে তাঁর এই নিয়োগ কার্যকর হয়। আখলাকুর রহমান চৌধুরীর জন্ম যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারে। বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান চৌধুরী এবং মা সুলতানা চৌধুরীর দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তিনি বড়। স্ত্রী সফিনা ও তিন সন্তানকে নিয়ে আখলাক লন্ডনে বাস করেন। তাঁদের আদি বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে।
আখলাকুর রহমান চৌধুরীর ভগ্নিপতি কাওসার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আখলাক স্ত্রী সফিনাকে নিয়ে নাইটহুড প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে রানি তাঁর সঙ্গে হাত মেলান এবং কাজ সম্পর্কে জানতে চান। তিনি বলেন, গত ১৬ অক্টোবর লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিসে আখলাকুর রহমান চৌধুরীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
যুক্তরাজ্যের বিচারকেরা সাধারণত গণমাধ্যমে কথা বলেন না। নিজেদের অর্জনের বিষয়েও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না। প্রভাবমুক্ত থাকতেই এমন রীতি মানা হয় দেশটিতে।
গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক আখলাকুর রহমান চৌধুরী। পরে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ১৯৯২ সালে ‘বার অ্যাট ল’ সম্পন্ন করে শুরু করেন আইন পেশা। বাণিজ্য, কর্মসংস্থান ও তথ্য আইন বিশেষজ্ঞ আখলাকুর রহমান দীর্ঘদিন পররাষ্ট্র দপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, রাজস্ব বিভাগসহ যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আদালত ‘কোর্ট অব আপিল’-এর দুজন বিচারকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ছিলেন ব্রিটিশ তথ্য কমিশনারের উপদেষ্টাও। আইন পেশায় অভিজ্ঞতা ও ব্যতিক্রমী অবদান রাখার জন্য তাঁকে ২০১৫ সালে কুইন্স কাউন্সেল বা কিউসি খেতাব দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে আখলাক ‘রেকর্ডার’ হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১৬ সালে তাঁকে ‘ডেপুটি হাইকোর্ট জজ’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ নিয়োগ পেলেন হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে। তিনি হাইকোর্টের কুইন্স ডিভিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিভাগ চুক্তি ও ব্যবসাসংক্রান্ত বিবাদের সুরাহা করে।
গত ২০ জুলাইয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ব্রিটিশ হাইকোর্টে মোট ৯৬ জন বিচারক রয়েছেন। এর মধ্যে কুইন্স ডিভিশনের বিচারক ৬১ জন। হাইকোর্টের বিচারকেরা লাল-কালো রঙের গাউন পরেন বলে তাঁরা ‘রেড জাজেস’ নামেও পরিচিত।