বিরোধীদলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে বসার তারিখ ঠিক করলেও সরকারি দল আওয়ামী লীগ নিজেদের ছক বা পরিকল্পনা অনুযায়ীই নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে। ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় ও নতুন মামলা দেওয়াও বন্ধ হয়নি।
তারপরও কেন পুনরায় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে রাজি হলো সরকারি দল, এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগ কিছুটা চাপ অনুভব করছে। তাই বিরোধীদের নির্বাচনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটা বোঝানোর জন্য পুনরায় সংলাপে সাড়া দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, তারা মনে করছে, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে একটা সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে চাইছে। তবে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আগের অবস্থানে আছে।
ঐক্যফ্রন্ট কত দূর যায় বা কতটা চাপ তৈরি করতে পারে, সেটাও সরকারি দল পর্যবেক্ষণ করছে। আজ মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাত দফা দাবিতে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ আছে। ৯ নভেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ। এ দুটি সমাবেশে জমায়েত এবং ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী কর্মসূচির প্রতিও সরকারের পর্যবেক্ষণে থাকবে।
খুব বেশি চাপ তৈরি হলে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় বিরোধী জোটকে দুই-একটি মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা হতে পারে। পরিস্থিতি বুঝে সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা চলতে পারে।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট থেকে দাবি করা হচ্ছে সংসদ ভেঙে দিতে হবে বা নিষ্ক্রিয় করতে হবে। আমরা বলেছি সংসদ নিষ্ক্রিয় থাকবে। আলোচনায় আসুন তাঁরা, যদি সংবিধানের ভেতরে থেকে আর কোনো পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তিসংগত প্রস্তাব করেন, গ্রহণ করার মতো হলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে।’
গত রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করে ১৪ দলের শরিকেরা। বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী দুটি বিষয় পরিষ্কার করেছেন। প্রথমত সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটা নির্বাচন হবে, এই প্রস্তুতি সবাইকে নিতে বলেছেন। আর নির্বাচন যথাসময়ে হবে এবং ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, এটাও স্পষ্ট করা হয়েছে। ১৪ দলের শরিকেরাও সংবিধানের মধ্যে থেকে যতটা ছাড় দিয়ে বিরোধীদের নির্বাচনে আনা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বড় দল হিসেবে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ছকে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে আসবে বলে আওয়ামী লীগ মনে করে। পাশাপাশি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে ভাঙনের তৎপরতাও আছে। ধর্মভিত্তিক কিছু দলের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের সমঝোতা আছে, আর কয়েকটির সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এখন বাইরে আছে কেবল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট ও আটটি বাম দলের জোট বাম গণতান্ত্রিক জোট। শেষ পর্যন্ত এই বাম জোটকে ভোটে নিয়ে আসতে পারলে ঐক্যফ্রন্টকে চাপে ফেলার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ।
আজ দুপুরে ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সঙ্গে এবং সন্ধ্যায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে সংলাপ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন বুধবার দুপুরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক সংলাপ-প্রক্রিয়া শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর বৃহস্পতিবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা হতে পারে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর সব বক্তব্যের রেকর্ড রাখা হচ্ছে। বক্তব্যগুলো একসঙ্গে করে সেগুলো থেকে সারসংক্ষেপ করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ফলাফল ও সরকারের সিদ্ধান্ত সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানাবেন। আগামী বৃহস্পতি বা শুক্রবার এই সংবাদ সম্মেলন হতে পারে।