পিঁয়াজের ঝাঁজে রীতিমতো কাঁদছে ক্রেতা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। আর আমদানিকৃত পিঁয়াজের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসেবেই এই দর তুলে ধরা হয়েছে।
সংস্থাটির হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে দেশি পিঁয়াজের দর ১৫৩ শতাংশ আর আমদানিকৃত পিঁয়াজে ২০০ শতাংশ বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে পিঁয়াজের। বিশেষ করে ভারতীয় পিঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়ায় দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির বাজারে যেন ‘আগুন’ লেগেছে। গত বৃহস্পতিবার হঠাত্ করেই ভারতীয় পিঁয়াজের রফতানি মূল্য একলাফে টন প্রতি ৩৫২ ডলার বাড়ানো হয়।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, অক্টোবরে প্রতি টন পিঁয়াজের রফতানি মূল্য ছিল ২৫০ ডলার। কয়েক দফায় এটি বাড়িয়ে ৫শ’ ডলার করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার তা ৮৫২ ডলার নির্ধারণ করেছে ভারতের কৃষিজাত কাঁচা পণ্যের মূল্য নির্ধারণী সংস্থা (ন্যাফেড)। যা কার্যকর হয়েছে শনিবার থেকে। হিলি কাস্টমসের কর্মকর্তা ফকর উদ্দিন জানান, নভেম্বর মাসের ২৩ দিনে (শুক্রবার বাদ দিয়ে) ১১ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন পিঁয়াজ আমদানি হয়েছে এ বন্দর দিয়ে। আর দাম বাড়ার পর গত শনিবার এ বন্দর দিয়ে মাত্র ১১ ট্রাকে ২২০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ টন পিঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন পিঁয়াজ উত্পাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার টন বেশি।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আলোচ্য সময়ে দেশে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পিঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার টন বেশি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে পিঁয়াজের জোগান এসেছে ২৯ লাখ টন। যা চাহিদার চেয়ে ৭ লাখ টন বেশি। তারপরও বাড়ছে পিঁয়াজের দাম। তাই মনে করা হচ্ছে সরকারি এসব হিসাবের মধ্যে কোথাও একটা ঝামেলা রয়েছে বা ব্যবসায়ীরা মুনাফা সর্বোচ্চ করার জন্যে খুব সচেতনভাবে প্রত্যেকটি ‘অপশন’ কাজে লাগাচ্ছে।