বরিশালে লবনে মূল্যবৃদ্ধির গুজবে চারদিকে হৈই চৈ পড়েছে। আগে থেকেই কম মূল্যে লবন সংগ্রহের তাগিদে ক্রেতারা বড় বড় বাজারগুলোতে ভিড় জমিয়েছে। বিকেলের পর পরিস্থিতি এতটাই বেশামাল হয়ে উঠেছে যে বিশেষ করে পোর্টরোডের দোকানগুলোতে লবন কিনতে শত শত মানুষ ভিড় জমায়। এসময় ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ মূল্যে লবন সরবরাহ করতে থাকে এবং মূল্য আরও বৃদ্ধি পাবে এই অজুহাতে। লবনের সমূহ মূল্যবৃদ্ধির গুজব শহরের ছড়িয়ে পড়লে এক ধরনের হাহাকার পড়ে যায়। খবর পেয়ে বরিশাল র্যাবের একাধিক পোর্টরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই উদ্ধদ্বু পরিস্থিতি মানুষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দেয়। সন্ধ্যার পরে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ লবনের মূল্যবৃদ্ধি হবে না বলে জেলা প্রশাসক ঘোষণাও দেন। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পর এবারই প্রথম লবনের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গুজব ছড়িয়ে।
সকাল থেকেই বরিশাল নগরীতে লবনের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে এধরনের গুজবে ডালপালা মেলতে থাকে। পূর্বে প্রতি কেজি লবন যেখানে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল আকস্মিক মঙ্গলবার ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা বিক্রি শুরু করে। ক্রেতারা আগেভাগেই লবন সংগ্রহ করে রাখতে বাজারমুখী দৌড়ঝাঁপ শুরু করে।
সূত্র জানায়- গত সোমবার রাত থেকেই ব্যবসায়ীরা লবন মজুত করে ফেলে। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট লবন গুদামে রেখে স্থানীয়ভাবে তৈরি খোলা লবন অতিরিক্ত দামে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করে। মঙ্গলবারের পরে লবন আর পাওয়া নাও যেতে পারে এমন পিনিক সৃষ্টি করা হয়। ফলে বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র দোকানি থেকে ক্রেতারা বাজার রোডের বড় বড় আড়তের মুখে ভিড় জমায়। দুপুরের পরে পরিবেশ পরিস্থিতি বেশামাল হয়ে ওঠে। হাজার হাজার ক্রেতাদের লবন সংগ্রহের জন্য জড়ো হতে দেখা যায়।
ব্যবসায়িক সূত্র জানায়- গুজব ছড়িয়ে গত এক দুপুরেই বিশেষ ব্যবসায়ী মহল দ্বিগুণ মনুফা লুফে নিয়েছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর গুদামে টনকে টনকে লবন মজুত করে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ধারনা করা হচ্ছে ২/১ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের মূল্য পড়ে যেতে পারে এই কারণে কিছু ব্যবসায়ীরা লবনের কৃতিম সংকট সৃষ্টিতে সুযোগ নিচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়- পোর্টরোডে লবন নিয়ে হৈই চৈ এবং আহাজারির খবর বরিশাল র্যাব অবহিত হওয়ার পর তাদের একাধিক টিম সেখানে অভিযান চালায়। এসময় গোটা পোর্টরোড র্যাব সদস্যরা ঘিরে ফেলে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবসায়িরা জানায়- মানুষের চাপের মুখে তারা খোলা বাজারে লবন বিক্রির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু কেজিপ্রতি কেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে তার কোন সদুত্তোর দিতে পারেনি। এরপরই লবন বিক্রি বন্ধ করে দেয়। জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় র্যাব। আরও কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে- বরিশালের নামকরা কয়েকজন ব্যবসায়ী গত কয়েকদিন ধরে লবন গুদামজাত শুরু করেছিলেন। খবর পাওয়া গেছে গোটা নগরীর বাজারগুলোতে র্যাব এখন টহল দিতে শুরু করেছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। এই উদ্ধদ্বু পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছে। সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক সাংবাদিক সম্মেলন করে অভয় বাণী শুনিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. অজিয়র রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন- লবনের মূল্যবৃদ্ধির কোন সম্ভবনা নেই। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় পিনিক ছড়াচ্ছে। এই ব্যাপারে তারা সতর্ক রয়েছে এবং মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে তাদের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।
পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান লবনের এই মূল্যবৃদ্ধির গুজবকে অনাকাঙ্খিত দাবি করে করে বলেন- আজকের পরিস্থিতি প্রমাণ করে বড় ব্যবসায়ীরা লবন মজুত করছেন এবং মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টায় রয়েছেন। এই ধরনের প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই জন্য পুলিশের একাধিক টিম ইতিমধ্যে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।’