নেদারল্যান্ডসের হেগে জাতিসংঘের ট্রাইব্যুনালে রাদকো ম্লাদিচের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ ২২ বছর অপেক্ষার পরে বিচার পেল বসনিয়ার স্রেব্রেনিকা ও সারায়েভোতে গণহত্যার শিকার হওয়া মুসলিমরা। বসনিয়ার কসাই বলে খ্যাত ম্লাদিচের বিচারের সম্মুখীন হওয়ার সময় পরিক্রমাটা সংক্ষেপে পাঠকের জন্য তুলে ধরা হল-
জুন ১৯৯১, যুগোস্লাভিয়ায় ভাঙন
স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্যে যুগোস্লাভিয়ার ভাঙনের শুরু হয়। সার্ব নেতৃত্বাধীন যুগোস্লাভিয়ান সেনাবাহিনী ১০ দিনের যুদ্ধ শেষে স্লোভেনিয়া ত্যাগ করে, তবে ক্রোয়েশিয়ার যুদ্ধটি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
এপ্রিল ১৯৯২, বসনিয়ায় যুদ্ধ শুরু
বসনিয়ার দুই তৃতীয়াংশ এলাকার দখল নেয়ায় বসনিয়ায় থাকা সার্বীয়রা এবং রাদকো ম্লাদিচের নেতৃত্বে সারায়েভো অবরোধ শুরু হয়। এর এক মাস পরেই বসনিয়াতে সার্ব বাহিনীর কমান্ডার হন ম্লাদিচ। ৪ বছরব্যাপী অবরোধে ১১ হাজার ৫শ মানুষের মৃত্যু হয়।
জুলাই ১৯৯৫, স্রেব্রেনিকা গণহত্যা
ম্লাদিচের নেতৃত্বে তার সেনাবাহিনী স্রেব্রেনিকা দখল করে। সেখানে ৭ হাজারেরও বেশি মুসলিম পুরুষ ও কিশোরকে স্রেফ হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে সার্ব বাহিনীর উপর বিমান হামলা করে ন্যাটো। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ফরমার যুগোস্লাভিয়া ম্লাদিচ ও সাবেক বসনীয়-সার্ব নেতা রাদোভান কারাদিচের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ গঠন করে।
১ নভেম্বর, ১৯৯৫ ডেটন চুক্তি সাক্ষর
১৯৯৫ সালে ডেটন চুক্তির মাধ্যমে বসনিয়া যুদ্ধের অবসান হয় এবং সেখানে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্ট হয়। একটি বসনীয় ও সার্বদের নিয়ে, আরেকটি মুসলিম ও ক্রোয়েশীয়দের নিয়ে।
১৯৯৭, ম্লাদিচের পলায়ন
ম্লাদিচের সন্ধানে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা এবং ন্যাটোর শান্তিরক্ষী বাহিনীর অভিযান জোরদার হয়। কিন্তু পরিবার ও সার্বিয়ায় তার সমর্থকদের সহায়তায় তাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে পলাতক থাকেন ম্লাদিচ। তাকে ফুটবল খেলার মাঠে দেখা যায়, এমনকি সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের জনপ্রিয় রেস্তোরাতে তোলা তার ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
২৬ মে, ২০১১ ম্লাদিচ গ্রেফতার
সার্বিয়ার উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে ম্লাদিচ গ্রেফতার হন। ওই বছরের জুনে জাতিসংঘ ট্রাইবুনালের সম্মুখীন হন তিনি।
১ ডিসেম্বর, ২০১৬ অভিযোগের শুনানির সমাপ্তি
ইউরোপে ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ গণহত্যা বিষয়ক অভিযোগের শুনানির শেষ হয়। জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনাল ৫৩০ দিনব্যাপী শুনানিতে ৫৯১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে এবং ১০৬টি ভিন্ন অপরাধের ১০ হাজার প্রমাণ যাচাই বাছাই করে।
২২ নভেম্বর, ২০১৭ ম্লাদিচ দোষী সাব্যস্ত
স্রেব্রেনিকা হত্যাকাণ্ডের ২০ বছর পর ৭৪ বছর বয়সী ম্লাদিচকে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।