মনোনয়নের দর কষাকষিতে এবার ভাগ্য উল্টে যেতে পারে রংপুরের ছয়টি আসনের দু’একজন সংসদ সদস্যের। মনোনয়ন চূড়ান্তের শেষ মুহূর্তে ছয়টি আসনের মধ্যে ৩/৩ নাকি ৪/২ সমীকরণ সেটা নিয়ে এখন চলছে বিশ্লেষণ। যদিও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ.এম এরশাদ সম্প্রতি রংপুর সফরে এসে ঘোষণা দেন, ছয়টি আসনের একটিতেও ছাড় নয়। তবে শেষ পর্যন্ত জোটগতভাবে নির্বাচনে গেলে সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ চারটি নাকি তিনটি আসন ছেড়ে দিচ্ছে এ নিয়ে স্থানীয় ভোটারসহ রাজনৈতিক মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে চারজন এবং জাতীয় পার্টির দুইজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরমধ্যে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, রংপুর-৩ (সদর) আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ.এম এরশাদ, রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক টিপু মুন্শি, রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ.এন আশিকুর রহমান এবং রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির এক প্রভাবশালী নেতা জানান, ৬টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ৩-৩ করে ভাগাভাগির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। তবে জাতীয় পার্টি থেকে আরো একটি আসন দাবি করা হয়েছে।
সেক্ষেত্রে ৬টি আসনের মধ্যে জাতীয় পার্টি চারটি এবং আওয়ামী লীগ দু’টি। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত বনিবনা হলে আওয়ামী লীগের বর্তমান চার সংসদ সদস্যের মধ্যে দুই জনকে বাদ পড়তে হচ্ছে। আর ৩-৩ করে সমঝোতা হলেও আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য এবার মনোনয়ন দৌড়ে টিকতে পারছেন না।
সূত্রটি জানায়, রংপুর-৩ (সদর) আসনটি জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে। জোটগত নির্বাচন হলে এবারও এরশাদ এই আসনে প্রার্থী হবেন এটা নিশ্চিত।
এছাড়া রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ির এলাকা। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে তিনিই নির্বাচিত হয়েছেন। পরে উপ-নির্বাচনে আসন ছেড়ে দিলে ২০০৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ও ২০১৪ সালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এবার প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার দু’জনই এই আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এই আসনে প্রধানমন্ত্রী অথবা স্পিকার নির্বাচন করবেন সেটা দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাকি রংপুর-১, ২, ৪ ও ৫ এ চারটি আসনের মধ্যে রংপুর-১ সহ আরো দু’টি আসন দাবি করেছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ তাদের দাবি মেনে নিলে ২, ৪ ও ৫ আসনের যেকোনো দুইজন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। তবে রংপুর-১ সহ আর একটি আসন ছেড়ে দিলে ওই তিনটি আসনের যেকোনো একজন সংসদ সদস্য বাদ পড়বেন।
কার ভাগ্যে এবার নির্বাচনী টিকিট জুটছে না এ নিয়ে গোটা এলাকায় চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।