তাঁরা দুজন গতবারও ছিলেন একই দলে। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) তৃতীয় আসরেও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পেশোয়ার জালমি সাকিব আল হাসানকে ধরে রাখার পাশাপাশি ড্রাফট থেকে নিয়েছে তামিম ইকবালকেও।
আর এই দলভুক্তির খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে পেশোয়ারের স্থানীয় পশতু ভাষায় তাঁদের দুজনের ‘টুইট’ করা নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অকারণ সমালোচনার ঝড়, তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের মধ্যেও তোলপাড়টা কম নয়। বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে ক্রমেই বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের দুয়ার উন্মোচিত হওয়ার সময়েই যে তাঁদের এ ধরনের আসরে খেলার সুযোগ সংকুচিত করে দেওয়া হয়েছে। বিসিবিই করে দিয়েছে সেটি। দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসন ঠিক করেছে, এখন থেকে এর চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারদের বছরে সর্বোচ্চ দুটির বেশি বিদেশি লিগে খেলার এনওসি বা অনাপত্তিপত্র দেওয়া হবে না।
সেই সঙ্গে চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের জন্য দেশের ফার্স্ট ক্লাস প্রতিযোগিতা এনসিএল (জাতীয় ক্রিকেট লিগ) এবং বিসিএলে (বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ) খেলাও বাধ্যতামূলক করেছে। এর আগেও এই আসরগুলোতে খেলার নির্দেশনা ছিল। তবে সেটা এবারের মতো আনুষ্ঠানিক ছিল না কখনোই। গত পরশু বোর্ডের বেতনভুক্ত ক্রিকেটারদের প্রত্যেককে পাঠানো চিঠিতে ঘরোয়া ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অংশ নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উল্লেখ করার পাশাপাশি বিদেশি লিগে খেলার এনওসি নিয়েও নিজেদের কঠোর অবস্থান জানায় দিয়েছে বিসিবি। বোর্ড থেকে এ রকম চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাকিব আল হাসানসহ জাতীয় দলের আরো বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারও।
তবে এঁদের প্রত্যেকেই এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন।
এই মুহূর্তে সেটি খুব স্বাভাবিকও। কারণ প্রতিদিন বিসিবি থেকে নানা বিধি-নিষেধের এত চিঠি তাঁদের কাছে যাচ্ছে যে ছড়িয়ে পড়েছে ‘চিঠি আতঙ্ক’ও! গতকালই যেমন এক চিঠিতে যেকোনো বিষয়েই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। যার ব্যত্যয় হলে নিশ্চিত আর্থিক জরিমানা এড়াতে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ক্রিকেটাররা। যদিও সর্বোচ্চ দুটি বিদেশি লিগে খেলার নিয়ম করে দেওয়াটা যে পছন্দ হয়নি, সেটি অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশে দ্বিধা ছিল না কারো। এঁদেরই একজন বলছিলেন, ‘একটা সময় ছিল, যখন বিদেশের লিগে বাংলাদেশের একজনই (সাকিব) খেলত। এখন দিন দিন বিদেশে আমাদের ক্রিকেটারদের চাহিদা বাড়ার সময়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটি বড় ধাক্কাই। ’
যদিও বিসিবি বলছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময় জাতীয় দল যাতে চোটের ধাক্কায় নাকাল না হয়, সে জন্যই বিদেশি লিগে খেলতে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের কঠোর মনোভাব। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনা করেই আমরা এ সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। একেই আমাদের পরবর্তী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটসূচি খুব ঠাসা, তার ওপর ক্রিকেটারদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যাপারও আছে। এর সঙ্গে জড়িত খেলোয়াড়দের ইনজুরি ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও। আমরা চাই আন্তর্জাতিক খেলার সময় আমাদের সেরা খেলোয়াড়দের সবাইকে পেতে। তাই বছরে দুটির বেশি বিদেশি লিগে খেলতে দেওয়া হবে না কাউকেই। ’ এমনকি কারো কারো ক্ষেত্রে মিলতে পারে বিদেশে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার ছাড়পত্রও। সেটি কোন ক্ষেত্রে? তাও নির্দিষ্ট করেছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী, ‘কেউ যদি একই বছরে টি-টেন টুর্নামেন্টও খেলে, তাহলে সে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টও খেলতে পারবে একটি। কেউ ইংল্যান্ডে গিয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেললে তার জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ক্রিকেটারদের যে চিঠিটা আমরা দিয়েছি, তাতে এসব কিছুরই উল্লেখ আছে। ’
এই নিয়মে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা সাকিব আল হাসানের। কারণ বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে বাংলাদেশিদের মধ্যে তাঁর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। আগামী ১৪ ডিসেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাতে শুরু হতে যাওয়া নতুন ফরম্যাটের ক্রিকেট টি-টেনের আসরে তাঁর পাশাপাশি দল পেয়েছেন তামিম ও মুস্তাফিজুর রহমানও। পরেরজন গত বছর সাসেক্সের হয়ে ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট খেলতে গিয়ে পাওয়া কাঁধের চোটে ছিলেন লম্বা সময় মাঠের বাইরে। অস্ত্রোপচার করিয়ে দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষে তবেই ফিরেছিলেন মাঠে। সাকিব-তামিম-মুস্তাফিজরা যদি পরের বছরও ১০ ওভারের ক্রিকেট খেলেন, তাহলে ২০১৮ সালে তাঁরা দেশের বাইরে খেলতে পারবেন শুধু একটি টি-টোয়েন্টি লিগেই। সে ক্ষেত্রে আইপিএল, সিপিএল (ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) নাকি পিএসএল? বাছবেন কোনটি? বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের দুয়ার ক্রমেই উন্মুক্ত হওয়ার সময়ে এই সংকটটা সাকিবের মতো না হলেও তামিম বা মুস্তাফিজেরও কম নয়!