শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদারের (২২) বিরুদ্ধে ৬ নারীর আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, প্রথমে গ্রামের এক গৃহবধূর গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে রাখেন তিনি।
এরপর ভিডিও দেখিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। সে ঘটনাও গোপনে ভিডিও ধারন করেন আরিফ। পরে সেই ভিডিও এলাকার মানুষের হাতে এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন তিনি। এ ভাবে প্রতারণা করে ছয় জন নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন তিনি। ওই নারীদের ধর্ষণের দৃশ্যর ভিডিও গ্রামের মানুষের মুঠোফোনে ছরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। আপত্তিকর ওই ভিডিও ও ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছরিয়ে পরেছে।
স্থানীয় গ্রামবাসী জানায়, আরিফ ভেদরগঞ্জ উপজেলার ফেরাঙ্গিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। সে স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র। ২০১৫ সালের জুন মাসে তাকে নারায়নপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
সে প্রতারণা করে যাদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করেছে তাদের মধ্যে দু‘জন স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্রী, দু‘জন গৃহবধূ এবং বাকি দু‘জনের পরিচয় এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
গত ১৫ অক্টোবর থেকে ওই নারীদের সাথে আরিফের ধর্ষণের ভিডিও গ্রামের যুবক ও তরুণদের মুঠোফোনে ছড়িয়ে পরে। ১৭ অক্টোবর থেকে ওই ভিডিও ও ছবি ফেসবুকে ছড়াতে থাকে।
ভুক্তভোগী নারীরা লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি নিয়ে কোন মামলা করেননি। এদের মধ্যে একজন গৃহবধূর স্বামী প্রবাশে থাকেন। ওই নারীর শ্বশুর-শাশুরী তাকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। আরেক গৃহবধূ গ্রাম থেকে চলে গেছেন। কলেজ ছাত্রীরা লোকলজ্জার ভয়ে কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী এক গৃহবধূর বোন বলেন, আমার বোনের কম বয়স। আরিফের প্রতরণার ফাঁদে পড়েছে। তাকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কয়েকদফায় অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আতঙ্কে ও লোক লজ্জার ভয়ে এখনও মামলা করিনি।
ভুক্তভোগি এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, আরিফ আমাকে শেষ করে দিয়েছে। এখন সমাজে কিভাবে মুখ দেখাব। মরে যাওয়া ছারা কোন পথ রইল না।
নারায়নপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ এ কাজ করতে পারেনা। এ ঘটনাটি এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ঘৃনা ও নিন্দার সৃষ্টি করেছে। আমি আরিফের বাবাকে নিদের্শ দিয়েছি তাকে হাজির করার জন্য। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের জানানো হয়েছে। তাকে পাওয়া গেলে সামাজিকভাবে বিচার করা হবে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ রাড়ী বলেন, আরিফ এমন চরিত্রহীন মানুষ এটা আমাদের জানা ছিলনা। সে একাধিক নারীর সাথে প্রতারণা করে ভিডিও ধারণ করেছে তা ক্ষমা করা জায়না। এঘটনা জানার সথে সাথে আমরা ওই এলাকায় খোঁজ খবর নেই। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেই। আর আরিফ হোসেনকে শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মেহেদি হাসান বলেন, ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক মেয়েদের ধর্ষণের ভিডিও ছরিয়ে দেয়ার বিষয়টি মৌখিকভাবে শুনেছি। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ না পাওয়া গেলে কিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভেদরগঞ্জের ছাত্রলীগের নেতা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা বড় ধরনের একটি সাইবার ক্রাইম। পুলিশ অভিযুক্ত ওই ছেলেকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। যে কোন উপায়ে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।