জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের প্রতিবেদন বলছে, এইডসের কারণে ২০১৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হতে পারে। এই সময়ে এইচআইভি প্রতিরোধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রকল্পে বাড়তি বিনিয়োগ করা না হলে প্রতিদিন ৭৬ জন কিশোর-কিশোরীর মৃত্যু হবে। বর্তমানে প্রতি ২ মিনিটে একজন কিশোর বা কিশোরী এইচআইভি আক্রান্ত হচ্ছে।
আজ ২৯ নভেম্বর নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ইউনিসেফের নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস-সম্পর্কিত মৃত্যু কমানোয় ধীরগতির তথ্যের প্রেক্ষাপটে কিশোর-কিশোরীদের চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
‘শিশু, এইচআইভি ও এইডস: ২০৩০ সালের বিশ্ব’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান ধারা বজায় থাকলে এইচআইভিতে আক্রান্ত ০-১৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে আনুমানিক ২ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছাবে। এইডস-সম্পর্কিত কারণে মারা যাওয়া শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা ভবিষ্যতে কমবে। বর্তমানের ১ লাখ ১৯ হাজার থেকে ২০৩০ সালে তা ৫৬ হাজারে নেমে আসবে। তবে এই কমার হার খুবই ধীরগতির, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে জীবনের প্রথম দশকে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা কমে অর্ধেকে নেমে আসবে। তবে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা কমবে মাত্র ২৯ শতাংশ। এইডস-সম্পর্কিত কারণে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ৫৭ শতাংশ কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে ১৫-১৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর হার কমবে ৩৫ শতাংশ।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েত্তা ফোর বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসে আক্রান্ত হওয়া শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে বিশ্ব সঠিক পথে নেই। মায়েদের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে এইচআইভির সংক্রমণ ঠেকাতে প্রচলিত প্রকল্প কাজে দিচ্ছে, তবে তা বেশি দূর এগোয়নি। অন্যদিকে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং বেশি বয়সী শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর প্রকল্পগুলো যে অবস্থানে থাকা উচিত ছিল সে অবস্থানে নেই।
প্রতিবেদনে চলমান কর্মসূচিতে দুটি প্রধান ঘাটতির কথা বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে শিশুদের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ ঠেকানোর কার্যক্রমে মন্থর অগ্রগতি। অন্যটি হচ্ছে এই মহামারির কাঠামোগত ও আচরণগত চালিকা শক্তি চিহ্নিত করার ব্যর্থতা । বলা হয়েছে, অনেক শিশু ও কিশোর-কিশোরীই জানে না তারা এইচআইভিতে আক্রান্ত কি না। এইচআইভি-পজিটিভ বা এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে যাদের পাওয়া গেছে ও চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।
ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী আনুমানিক ৭০০ কিশোর-কিশোরী প্রতিদিন নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়। অর্থাৎ প্রতি ২ মিনিটে আক্রান্ত হয় একজন।
বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব কম (<.০১ %)। ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৮৬৫টি নতুন সংক্রমণের ঘটনা তুলে ধরে, যার মধ্যে ৫ শতাংশের বেশি শিশু ও কিশোর–কিশোরী, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে।