ডিজিটাল বাংলাদেশ হোক গুজব মুক্ত।
মুক্তা আক্তার :
সাধারণ জনগণের কাছে পৌছে যাবার জন্য গণমাধ্যমে প্রচারিত গুজব বর্তমান সময়ের এক বহুল আলোচিত বিষয়। বেশিরভাগ গুজব ছড়ানোর পেছনে কুচক্রীদের যে উদ্দেশ্য থাকে তার হাত থেকে রেহাই পাওয়া রীতিমত কঠিন হয়ে পড়েছে।অতি অল্প সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও নোংরা চিত্র তুলে ধরে কিছু অসুস্থ মানুষ তাদের সার্থ উদ্ধারে বদ্ধপরিকর।প্রায় বেশিরভাগ সময়ে আমরা ডিজিটাল গুজবে এত বেশি আসক্ত হয়ে যাই যে ভালো-মন্দ, সত্য- মিথ্যা,ন্যায়-অন্যায় কিংবা উচিত-অনুচিত বিচারের জ্ঞানটুকুও থাকেনা।গুজবের বিষাক্ত হাওয়া ছড়িয়ে একদল হীনমনের মানুষ ঠিকই আনন্দ খুঁজে নেয় তবে তাতে ভুক্তভোগীদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সোনার বাংলা গড়ার যে লক্ষ্য আর চেষ্টা নিয়ে বাংলাদেশের পথ এগিয়ে চলছে, সে পথের অন্যতম শত্রু এ দেশেরই কিছুসংখ্যক মিথ্যাচারী মানুষ।
ভুল খবর, মিথ্যা কথা, সাজানো ঘটনা আর অশ্লীল চিন্তা ভাবনাকে সমাজে মহামারির মত ছড়িয়ে দিতে ডিজিটাল বাংলাদেশরই বিভিন্ন সুবিধাকে খারাপ অর্থে কাজে লাগানো হয়।প্রতিদিনই অনলাইন মাধ্যমগুলোতে কিছু ভিত্তিহীন কিন্তু আবেগধর্মী খবর উঠে আসে যা আসলে সত্যি নয়।কিছু আক্রমণাত্মক খবর ও ছবি আরো অন্যান্য বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম ব্যবহার করে জনজীবন করে তুলছে দুর্বিষহ।গুজবে কান দেবেন কি দেবেন না বুঝে ওঠার আগেই তা ভাইরাল হয়ে যায় গণমাধ্যমগুলোতে। কখনো কখনো একদম নিরীহ ও নির্দোষ মানুষগুলোকে ঘিরে ছড়িয়ে যাওয়া গুজব ডেকে আনে অপূরণীয় ক্ষতি।কোটা আন্দোলনকে ঘিরে ডিজিটাল গুজবের যে ছড়াছড়ি তা যুক্তিসংগত দাবি এবং পাল্টা দাবিকে একরকম রাজনৈতিক সংঘর্ষে রূপ দেয়। বাংলাদেশে জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়ার যথা,তাদের ব্যক্তিগত জীবন এমন কি সদ্য জন্ম নেয়া শিশুকে নিয়ে ছড়ানো মিথ্যাচারগুলো শুধু নোংড়া মনেরই পরিচায়ক।
কিছুদিন আগেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক গুজবে উঠে আসে, ” হাসপাতালের বিল দিতে না পেরে মা ও নবজাতকের আত্মহত্যা।”অথচ পরবর্তীতে তদন্তে আসল ঘটনা উঠে এলো যে,আত্মহত্যাটা ছিল পারিবারিক ঝগড়া ও প্রবাসী স্বামীর উপর ক্ষোভের জের ধরে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঘিরে গুজব ছড়ানো একদল লোক তো নিজের পেশা হিসেবেই নিয়েছে।একদলকে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে উষ্কে দেয়া, মিথ্যা অভিযুক্ত করা কিংবা সত্যের সাথে মিথ্যা মিশিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করাই এদের মূল লক্ষ।
আওয়ামী লীগ, বি.এন.পি,জামায়াত-শিবির,ইসলামী শাসনতন্ত্রসহ যে দলই হোক না কেন তাতে কিছু লোক থাকে যারা দলের ইচ্ছায় কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে হোক, এক দল অন্য দলের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে নিজ ও নিজের দলের স্বার্থ হাসিল করতে চায়।কিন্তু সত্যিকার অর্থে গুজবে খারাপ ছাড়া ভালো কোন ফলাফল নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল প্রযুক্তি ও সুবিধাকে ভুলভাবে কাজে লাগিয়ে গুজব প্রচার একটি সামাজিক ব্যাধিতে রূপান্তর হতে চলেছে।
উন্নয়নের সরকার ও এ সরকারের অর্জনগুলোর প্রতি সম্মান রেখে ডিজিটাল গুজব না ছড়ানো ও গুজব রটনাকারীদের শনাক্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাব বিস্তারকারী মিথ্যাচারগুলো যাতে না ছড়ায় সেই দিকে বিশেষ নজরদারী প্রয়োজন।নিজে গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থেকে ও মিথ্যা প্রচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে সাহায্য করুন। পাশাপাশি গুজবের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রয়োজন জনসচেতনতা।
শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।