শামীম ইসলাম:
বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মহাশ্মশানের ৫০ হাজারের বেশি সমাধিমন্দির মোমের আলোতে ঝলমল করছে। সমাধির পাশে মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রয়াতদের আত্মার শান্তি কামনা করছেন স্বজনরা। অসংখ্য মোমের আলোয় পুরো মহাশ্মশান এলাকা অন্যরকম আবহ সৃষ্টি করেছে।
সমাধিস্থলে গিয়ে মোমের আলো ছড়িয়ে, আগরবাতি জ্বালিয়ে, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে প্রয়াত প্রিয়জনকে স্মরণ ও আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করছেন স্বজনরা। পাশাপাশি প্রয়াত প্রিয়জনের উদ্দেশে তার সমাধিস্থলে নিবেদন করা হয় প্রয়াতের পছন্দের নানা ধরনের খাবার।
উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় শশ্মান দীপাবলি উৎসবকে ঘিরে এই বর্ণিল আয়োজন। এ কারণে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই নগরীর কাউনিয়া মহাশ্মশানে মানুষের ঢল নেমেছিল। সন্ধ্যা হতে না হতেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। লাখো মানুষের সমাগম ঘটেছে মহাশ্মশানে। নারী, পুরুষ, শিশুরা প্রত্যেকের হাতে ছিল মোমবাতি, আগরবাতি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস কালিপূজার আগের দিন ভূতচতুর্দশী তিথিতে পূজা অর্চনা করলে প্রয়াত ব্যক্তির আত্মা শান্তি লাভ করে। তাই আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি প্রয়াত প্রিয়জনের উদ্দেশে তার সমাধিস্থলে নিবেদন করা হয় প্রয়াতের পছন্দের নানা ধরনের খাবার। সবকিছু করা হয় তিথি থাকা অবস্থায়।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার জানান, সোমবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে লগ্ন (তিথি) শুরু হয়ে শেষ হয় মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে। দুপুরের পর থেকে প্রয়াতদের স্বজনদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটেছে মহাশ্মশানে।
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সভাপতি মানিক মুখার্জি কুডু জানান, কথিত আছে এশিয়া মহাদেশ তথা পৃথিবীর বৃহত্তম আয়োজন এটি। ভারতে এটি দীপাবলি উৎসব নামে পরিচিত হলেও বরিশালে শশ্মান দীপালি উৎসব হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। নতুন পুরনো মিলিয়ে মহাশ্মশানে ৬১ হাজারেরও বেশি সমাধি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজারের অধিক পাকা, ১০ হাজার কাঁচা মঠ এবং ৮শ’ মঠ রয়েছে যাদের স্বজন এই দেশে নেই। সেইসব মঠগুলো হলুদ রঙ করা হয়েছে। স্বজন না থাকা মঠগুলোতে কমিটির পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।
মানিক মুখার্জি কুডু জানান, পাঁচ একর ৯৬ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত মহাশ্মশানের পুরনো অংশের অধিকাংশ সমাধি ধ্বংস হয়ে গেলেও এখনো সেখানে ব্রাহ্মণদের ২/৩টি এবং রূপসী বাংলার কবি জীবনান্দ দাসের পিতা সত্যানন্দা দাস ও পিতামহ সর্বানন্দা দাস, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসি মা, শিক্ষাবিদ কালিচন্দ্র ঘোষসহ খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গের সমাধি রয়েছে।
শশ্মান দিপাবলি উৎসব নির্বিঘ্ন এবং উৎসবমুখর করতে মহাশ্মশানের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে ১২টি সিসি ক্যামেরা এবং নিয়োগ করা হয়েছে ২০০ স্বেচ্চাসেবী।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, প্রচুর লোকের সমাগম ঘটেছে। শশ্মান দীপালি উৎসবকে নির্বিঘ্ন এবং উৎসবমুখর করতে শশ্মান এলাকায় দেড় শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে।