বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে গত ৩০ অক্টোবর গৌরনদী থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছেন মুন্নি বেগম। এসে দেখেন বিছানা খালি নেই। তাই মেঝেতে বিছানা করে অন্য শিশুর সঙ্গে রাখা হয়েছে।
একই দিন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন রোজিনা বেগম। তিনি বলেন, খালি না থাকায় তিন শিশুর সঙ্গে এক বিছানায় রেখে তার চিকিৎসা চলছে।
মুন্নি বেগম ও রোজিনা বেগম বলেন, তাঁদের সন্তানেরা হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। উপায় না দেখে সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
চিকিৎসকেরা জানান, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ ঠান্ডায় লেগে শিশুরা শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দিকাশি নিয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতালে শিশুদের জন্য বিছানা বরাদ্দ আছে ৪০টি। রোগীর সংখ্যা তিন শতাধিক। তাই এক বিছানায় তিন-চারজন শিশুকে রাখা হচ্ছে। মেঝেতেও একই অবস্থা। পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।
হাসপাতালটির শিশুবিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক এম আর তালুকদার মুজিব বলেন, ঠান্ডায় এক থেকে ছয় মাস বয়সের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ভর্তি ছিল ৩২০ জন শিশু। এত বেশি শিশুর চিকিৎসা দেওয়া খুব কঠিন।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের একটি বিছানায় তিন থেকে চারটি করে শিশু রাখা হয়েছে। মেঝেতে একেকটি বিছানায় দুই থেকে তিনজন করে শিশু আছে। মেঝেতে বিছানা করায় পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। এর মধ্যেই কাজ করছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা।
শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার ও পরিচালকের কার্যালয়ে থাকা তালিকা থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে ভর্তি হওয়া ৩০ শিশুকে বাদ দিলে বাকি ২৯০টি শিশু শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি ও বুকে কফ নিয়ে ভর্তি হয়েছে।
সেবিকা হাসিনা খানম বলেন, স্বাভাবিক সময়ও বিছানার তুলনায় কয়েক গুণ শিশু বেশি ভর্তি থাকে। কিন্তু সেটা দুই শর বেশি হয় না। গত ১০ দিনে শিশু রোগীর সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়ে গেছে।
সদর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকা থেকে আসা জুয়েল রানা বলেন, হাসপাতালে বিছানা নেই, মেঝেতেও জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে এক বিছানায় দুই শিশুর পাশে আমার শিশুকে রেখেছি। জ্বর, কাশি ও বুকে কষ্ট হচ্ছিল। এখন একটু ভালো।’
রহমতপুর এলাকার বাসিন্দা তাহমিনা বেগম বলেন, সোমবার রাতে দুই মাস বয়সের শিশুর শ্বাসকষ্ট দেখে সহ্য করতে পারছিলেন না। দ্রুত হাসপাতালে আসেন তিনি।
জানতে চাইলে হাসপাতালের বহির্বিভাগের দায়িত্ব পালন করা শিশু বিশেষজ্ঞ সালেহ আল-দ্বীন-বিন নাসির রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ২০০ শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের বেশির ভাগই ভাইরাসে আক্রান্ত। অনেককেই অন্তর্বিভাগে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই সময়ে শিশুদের উষ্ণ রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাইরের ঠান্ডা যেন শিশুর শরীরে না লাগে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রয়োজনে হাত-পা মোজা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। রাতে যাতে শিশুর ঠান্ডা না লাগে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।